কুড়িগ্রামে মেডিকেলে চান্স না পেয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১২ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না আসার হতাশা আর মানসিক চাপ শেষ পর্যন্ত কেড়ে নিল এক মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রাণ। উচ্চ ভোল্টেজ বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের খুঁটিতে উঠে আত্মহত্যা করেছেন নিয়ামুল ইসলাম নীরব (১৯) নামের এক শিক্ষার্থী।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রংপুর নগরীর লালবাগ এলাকা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বালাপাড়া এলাকায় ৩৩ হাজার ভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের একটি খুঁটিতে উঠে নিজের শরীর জড়িয়ে দেন নীরব। মুহূর্তেই বিদ্যুতের প্রচণ্ড শকে তার শরীর দগ্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে তিনি নিচে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়—এমনটাই দাবি করেছে পরিবার।
নিহত নীরবের চাচা আবু বকর সিদ্দিক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নীরব কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার বাবা এরশাদুল হক ও মা নুরুন্নাহার বেগম—উভয়েই স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। দুই ভাইয়ের মধ্যে নীরব ছিলেন বড়। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে রংপুরে থেকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর নীরব কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাননি। রোববার দুপুরের পর থেকে পরিবারের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে খবর আসে—নীরব বিদ্যুতের খুঁটিতে উঠে আত্মহত্যা করেছেন। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়।
নীরবের বাবার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে তার চাচা আবু বকর সিদ্দিক ফোন ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা ধারণা করছি, মেডিকেলে পড়ার সুযোগ না পাওয়ার তীব্র কষ্ট থেকেই নীরব এই পথ বেছে নিয়েছে। ওর বাবা-মা এখন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। ঘরে শোকের মাতম চলছে।”
বেরুবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আশরাফুল হক বলেন, “খবর পেয়ে পরিবারের বাড়িতে গিয়েছি। ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। পরিবারের সবাই শোকে স্তব্ধ। সন্ধ্যায় দাফনের প্রস্তুতি চলছে।”
একটি স্বপ্ন, অগণিত প্রত্যাশা আর পরিবারজুড়ে গড়া ভবিষ্যতের ছবি—সবকিছু মুহূর্তেই নিভে গেল এক তরুণের মর্মান্তিক প্রস্থানে। এই মৃত্যু আবারও প্রশ্ন তুলছে—ভর্তি পরীক্ষার চাপ, ব্যর্থতার ভয় আর মানসিক সহায়তার অভাব আমাদের শিক্ষার্থীদের কোথায় ঠেলে দিচ্ছে?



