৮ কুকুরছানা হত্যার ঘটনায় ওই সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী গ্রেপ্তার
পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৭ এএম
পাবনার ঈশ্বরদীতে মা কুকুরের অগোচরে আটটি কুকুরছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ফেলে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলার পর প্রধান আসামি নিশি রহমানকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় মামলাটি করেন।
ঈশ্বরদী থানার ওসি আ স ম আব্দুন নূর জানান, প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯–এর ৭ ধারায় মামলা নেওয়া হয়েছে। মামলায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নিশি রহমানকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে।
মামলার পরপরই গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ঈশ্বরদী সার্কেল) প্রণব কুমার জানান, বুধবার রাত দেড়টার দিকে ঈশ্বরদী পৌরসদরের রহিমপুর গার্লস স্কুলসংলগ্ন চারতলা একটি ভবন থেকে নিশি রহমানকে আটক করা হয়। তাকে আদালতে সোপর্দের প্রক্রিয়া চলছে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। বিষয়টি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার এবং বিভাগীয় মহাপরিচালককে জানানো হলে তারা আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
এদিকে কুকুরছানা হত্যার পর ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নকে গেজেটেড কোয়ার্টার ছাড়ার লিখিত নির্দেশ দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার বিকেলে তারা বাসা খালি করে চলে যান। নয়নের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের নিশি রহমান বলেন, বাচ্চাগুলো বাসার সিঁড়ির পাশে থাকায় ‘ডিস্টার্ব করত’। তাই তিনি বাজারের ব্যাগে ভরে পুকুরপাড়ের একটি সজিনা গাছের গোড়ায় রেখে আসেন। পুকুরে কীভাবে পড়েছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, ঈশ্বরদী ইউএনওর বাসভবনের এক কোণে ‘টম’ নামে একটি কুকুর দীর্ঘদিন ধরে থাকে। এক সপ্তাহ আগে টম আটটি ছানা জন্ম দেয়। রোববার গভীর রাতে ছানাগুলো নিখোঁজ হওয়ার পর সোমবার সকাল থেকে মা কুকুরটিকে ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। পরে কর্মচারীরা জানতে পারেন, নয়ন ও তার স্ত্রী রাতের অন্ধকারে বস্তায় ভরে ছানাগুলোকে পুকুরে ফেলে দিয়েছেন। সোমবার সকালে পুকুর থেকে উদ্ধার হয় আটটি ছানার মৃতদেহ, যা পরে ইউএনওর বাসভবনের পাশে মাটি চাপা দেওয়া হয়।
বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সোমবার সকালে নয়ন স্যারকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে তিনি অজ্ঞতার ভান করেন। তখন তার ছেলে বলে দেয়, ‘আম্মু ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলেছে।’ এরপর পুকুরে ভাসমান বস্তা উদ্ধার করে আটটি ছানাকেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
মা কুকুর টম সন্তানহানির শোকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মীরা তাকে চিকিৎসা দেন। মঙ্গলবারও ছানাগুলোর খোঁজে ইউএনও কার্যালয় ও উপজেলা চত্বরে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তাকে।



