Logo
Logo
×

সারাদেশ

নদী ভাঙনে তিন গ্রাম বিলীন হওয়ার পথে, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে আবেদন

Icon

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি :

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৩ পিএম

নদী ভাঙনে তিন গ্রাম বিলীন হওয়ার পথে, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে আবেদন

ছবি : সংগৃহীত

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সীমাবাড়ি ইউনিয়নের ঘাশুড়িয়া গ্রামজুড়ে এখন কান্না আর অসহায়তার চিত্র। বাঙালী নদীর ভাঙনে একে একে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের বসতবাড়ি ও চাষাবাদের জমি। গত এক মাসে অন্তত ছয়টি পরিবার সম্পূর্ণভাবে ঘরহারা হয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৫০ থেকে ৭০টি পরিবার।

ঘাশুড়িয়া গ্রামের দিনমজুর আবদুস সাত্তার ছিলেন নিজের জমির ওপর ছোট একটি ঘর নিয়ে সুখী সংসারের মালিক। কিন্তু বাঙালী নদীর অস্বাভাবিক ভাঙনে তাঁর স্বপ্নের ঘর আজ নদীর ভেতরে বিলীন। ঘরের অবশিষ্ট অংশের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি হাহাকার করে বলেন,

“নদী যখন খনন করে, তখনই প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিছিলাম। কিন্তু কেউ আমাগার কথা শুনল না। এখন বাড়িঘর নদীর মধ্যে চলে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে পুরো গ্রামই নদীর মধ্যে যাইব।”

শুধু আবদুস সাত্তারই নন; তাঁর পাশাপাশি আবদুস সালাম, ময়নাল প্রামাণিক, সুরমান প্রামাণিক ও জাহিদুল ইসলামসহ কমপক্ষে ছয়টি পরিবারের বাড়ি গত এক মাসে নদীতে হারিয়ে গেছে। তাঁরা সবাই শ্রমজীবী মানুষদিনমজুরি করে যাদের সংসার চলে।

গ্রামবাসীর অভিযোগ: মূল নদীপথ বাদ দিয়ে পাড় ঘেঁষে খনন

স্থানীয় কৃষক গোলাম মোহাম্মদ, নূরে আলম, আফছার আলীসহ ১৫ জন কৃষকের অভিযোগ, নদী খননের সময় ঠিকাদারদের নির্দেশ ছিল মূল নদীপথে খনন করা। কিন্তু তাদের অভিযোগঠিকাদাররা দক্ষিণ পাড় ঘেঁষে খনন করেন, যেখানে নদীর প্রবাহ নেই।

ফলে খননের পর স্রোত দক্ষিণ দিকে ধেয়ে আসতে শুরু করে এবং ভাঙন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়তারা জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডউপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি

তিন গ্রামজুড়ে একই চিত্র: ভাঙনের মুখে আশ্রয়ণ প্রকল্পও

বিগত দুই মাসে ভাঙনের শিকার হয়েছে নলুয়াসুঘাট ইউনিয়নের চকপাহাড়ি গ্রামও।

সুঘাট ইউনিয়নের চকপাহাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্তত চারটি ঘর এখন স্রোতের একদম কাছে। নদীর কিনারে থাকা আরও ১১টি পরিবারের বাড়ি যেকোনো সময় নদীতে ঢুকে যেতে পারে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীরা আতঙ্কিত

আশ্রয়ণ ঘর পাইছিলাম মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে। এখন মনে হয় নদী এইটা রাখবেও না।”

কৃষকদের মাথায় নতুন দুশ্চিন্তাসেচ না পেলে ৫০০ বিঘা জমি চাষ অনিশ্চিত

তিন গ্রামের কৃষকেরা জানান, তারা বাঙালী নদী থেকে সেচ নিয়ে প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে থাকেন। কিন্তু ভাঙনের কারণে সেচঘরগুলো নদীতে পড়ে গেছে। ফলে সামনে রবি মৌসুমে চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছেব্যবস্থা নেওয়া হবে

সীমাবাড়ি ও সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা বলেন, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। বিষয়টি তারা ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন।

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঞ্জুরুল আলম বলেন,

“নদীভাঙন পরিস্থিতি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানানো হবে।”

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান বলেন,

“আমি নতুন এসেছি। পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতাম না। খুব দ্রুত সরেজমিন গিয়ে বিষয়টি দেখব এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গ্রামজুড়ে এখন একটাই প্রশ্নকবে আসবে রক্ষা?

বাঙালী নদীর দক্ষিণ পাড় বরাবর কয়েক কিলোমিটারজুড়ে ভাঙনের গতি এখনো অব্যাহত। প্রতিদিনই মাটি ধসে পড়ছে নদীতে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন শত শত পরিবার।

স্থানীয়দের দাবি একটাই দ্রুত কার্যকরী তীর সংরক্ষণ ব্যবস্থা। তা না হলে মানচিত্র থেকে আরও অনেক ঘর, জমি ও মিলিয়ে যাবে বাঙালী নদীর বুকে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন