কক্সবাজার থেকে তিন জাহাজে সেন্টমার্টিনে পাড়ি ১২শ পর্যটকের
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৪ এএম
প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে জনপ্রিয় পর্যটনগন্তব্য সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা করল তিনটি জাহাজ। সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ যাত্রা শুরু করে। মৌসুমের প্রথম দফায় এসব জাহাজে আছেন ১২০০ পর্যটক।
ভোর থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে ঘাটে এসে ভিড় জমান যাত্রীরা। টিকিট দেখিয়ে জাহাজে ওঠার আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় পরিবেশবান্ধব পানির বোতল।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক অরুপ হোসেন প্রথমবারের মতো সেন্টমার্টিন ভ্রমণে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসনের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো, আশা করছি ভ্রমণটা দারুণ হবে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক অনুমতিপ্রাপ্ত জাহাজে দ্বীপে যেতে পারবেন। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপে রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকবে। যাত্রীদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কিউআর কোডযুক্ত টিকিট সংগ্রহ বাধ্যতামূলক। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, ছয়টি জাহাজকে অনুমতি দেওয়া হলেও যাত্রীসংখ্যা বিবেচনায় প্রথম দিনে তিনটি জাহাজ পাঠানো হয়েছে। জোয়ার-ভাটা ও নাব্যতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিদিনের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। সন্ধ্যায় এসব জাহাজ সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজারে ফিরে আসবে।
গত বছর থেকে টেকনাফ রুট বন্ধ থাকায় কক্সবাজার থেকে দীর্ঘ সমুদ্রপথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে আসা রোকসানা আলী বলেন, দূরত্ব একটু বেশি হওয়ায় ক্লান্তিকর লাগতে পারে, তবুও সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক শান্তি সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।
ঘাটে প্রবেশের সময় তল্লাশি ও সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, পর্যটকদের নির্বিঘ্ন ভ্রমণ নিশ্চিত করতে জাহাজে ও দ্বীপে তাদের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
সেন্টমার্টিনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গত অক্টোবরে সরকার ১২ দফা নির্দেশনা জারি করে। রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দে অনুষ্ঠান, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়াফল সংগ্রহ-বিক্রয়সহ সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিকর সব কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মোটরসাইকেল ও সি-বাইক চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে; পাশাপাশি নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে প্রথম দিনের যাত্রা পর্যবেক্ষণে এসে জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসন অঙ্গীকারবদ্ধ এবং পর্যটকদের সহযোগিতা কাম্য।
গত ১ নভেম্বর সেন্টমার্টিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও নভেম্বরজুড়ে রাত্রিযাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোনো জাহাজ চলাচল করেনি। রাত্রিযাপন অনুমতি মিলতেই নতুন মৌসুমের যাত্রা আবারও প্রাণ ফিরে পেল।



