শিশু রৌজা মনি হত্যায় জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৫৫ পিএম
কিশোরগঞ্জে বাড়ির সামনে খেলতে গিয়ে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর পাটক্ষেত থেকে শিশু রৌজা মনির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী ও স্বজনরা। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিকালে সদর উপজেলার চরমারিয়া এলাকার হাফিজিয়া মাদ্রাসার সামনে এলাকাবাসীর ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে নারী-পুরুষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় নিহত শিশু রৌজা মনির বাবাসহ স্বজনরা হত্যার বিচার চেয়ে নিজেরা অঝোরে কেঁদেছেন। চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি অন্যরাও। ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচারের আওতায় এনে ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে রওজা মনি হত্যার বিচারের দাবিতে ও আসামিদের অতিদ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে আহ্বায়ক কমিটি থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাইল মিয়া, কিশোরগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সদস্য সচিব ওবায়দুল্লাহ ওবায়েদ, সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এ.বি. ছিদ্দিক, কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিএ (বিদ্যুৎ) সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম সবুজ, জিনারাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক হাফেজ মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ, কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির শিক্ষানবিশ আইনজীবী মো. এনায়েত উল্লাহ, নিহত শিশু রৌজা মনির বাবা সুমন মিয়া বক্তব্য রাখেন।
এ সময় কান্না করতে করতে নিহত রৌজা মনির বাবা সুমন মিয়া বলেন, গত ৬ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে আমার মেয়ে রৌজা মনি খেলার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকে কোথাও তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরা আত্মীয়-স্বজনসহ সন্দেহজনক জায়গা ও আশপাশের পুকুর-ডোবায় কয়েক দফা তল্লাশি করেও আমার মেয়ের কোনো সন্ধান মেলেনি। পরে আমার মেয়ের খোঁজ পেতে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরিও করি। কিন্তু কোনো খোঁজই পাইনি আমার মেয়ের।
তিনি আরও বলেন, ১১ জুলাই সকালে মারিয়া এলাকার একটি পাটক্ষেত থেকে আমার মেয়ের মরদেহ পাওয়া যায়। আমি আমার মেয়ের প্রকৃত হত্যাকারীদের কঠোর ও সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। আমি চাই আমার মেয়ের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি, অর্থাৎ ফাঁসি হোক।
স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, আপনারা দেখেন আমার এলাকাবাসী হাজার হাজার মানুষ একত্র হয়েছি। আমাদের সকলের একটাই দাবি রৌজা মনির হত্যার ফাঁসি চাই। মেয়েটি হারানো পর অনেক চিন্তায় ছিলাম এলাকাবাসী, সর্বশেষ আমরা নিখোঁজের পাঁচদিন পর মারিয়া এলাকার একটি পাটক্ষেত থেকে রৌজা মনির মরদেহ পেয়েছি। রৌজা মনির হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত আছে আমরা তাদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি এবং এই হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই আমাদের আর কোন দাবি নাই। দাবি একটাই হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। যাতে আর কোনো পরিবার তাদের স্বজনকে না হারায়।
রৌজা মনি হত্যায় জড়িতদের ধরতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ইউপি সদস্য এ.বি. ছিদ্দিক বলেন, বিনা অপরাধে শিশু রৌজা মনিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রায় পাঁচ মাস হতে চললেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি। অবিলম্বে রৌজা মনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকল আসামিকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাইল মিয়া বলেন, একটি ৬ বছরের শিশু রৌজা মনির নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে আজ রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে, এর চেয়ে লজ্জাজনক ও দুঃখজনক আর কী হতে পারে? প্রশাসন এতটা উদাসীন ও দুর্বল হয়ে পড়েছে কেন, সেটাই এখন আমাদের বড় প্রশ্ন। যদি রৌজা মনির হত্যার সুষ্ঠু বিচার না হয়, তাহলে তার ছোট ছোট বন্ধু-বান্ধবরা কী শিখবে? তারা কি ভাববে, এই দেশে খুনিদের কোনো বিচার হয় না? তাই আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, অতি দ্রুত রৌজা মনির হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক।
উল্লেখ্য, গত ৬ জুলাই রৌজা মনি বিকেলে বাড়ির সামনে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর তার পরিবারের পক্ষ থেকে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করা হয়। নিখোঁজের পাঁচদিন পর অনেক খোঁজাখুঁজি শেষে মারিয়া এলাকার একটি পাটক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থানায় মামলা হলে পুলিশ সন্দেহভাজন তিনজন কে গ্রেপ্তার করলেও উচ্চ আদালত তাদেরকে জামিন দেয়। নিহত শিশু রৌজা মনি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের চরমারিয়া গ্রামের সুমন মিয়ার মেজো মেয়ে।



