চাহিদা বাড়ছে নড়াইলের দেশি মাছের শুঁটকি মৌসুম
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫১ এএম
নড়াইলে শীত শুরু হওয়ায় দেশি মাছের শুঁটকি তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় কাটছে জেলেদের। জেলার বিভিন্ন খাল, বিল ও নদী এলাকার খোলা স্থানে তৈরি করা হয়েছে মাচা। তার ওপর পলিথিন বিছিয়ে কাঁটাছেঁড়া করা মাছ রোদে শুকানোর কাজ চলছে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। শ্রমিক ও মৎস্যজীবীরা দিনভর পরিশ্রম করে মাছ শুকিয়ে শুঁটকি প্রস্তুত করেন। এরপর এসব মাছ বস্তায় ভরে সংরক্ষণ করা হয় এবং কয়েক মণ হয়ে গেলে পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
সদর উপজেলার মাইজপাড়া ও সিংগাশোলপুর ইউনিয়ন ঘিরে গড়ে উঠেছে দেশি মাছের শুঁটকিপল্লি। শীত নামার পর পানি কমে যাওয়ায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর মাছ। টাকি, শোল, কই, চাঁদা, পুঁটি—নানা প্রজাতির মাছ থেকে তৈরি হচ্ছে শুঁটকি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে পুঁটি মাছের শুঁটকি। জেলেরা জানান, তিন থেকে চার মণ কাঁচা মাছ শুকিয়ে পাওয়া যায় মাত্র এক মণ শুঁটকি, যা বাজারে বিক্রি হয় প্রতি মণে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকায়।
স্থানীয়দের দাবি, এখানে শুঁটকি তৈরিতে কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। শুধু লবণ মেখে রোদে শুকানোই তাদের পদ্ধতি। ফলে এসব শুঁটকি স্বাস্থ্যসম্মত, নিরাপদ এবং চাহিদাসম্পন্ন।
শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, বছরের এই সময়টাতেই তাদের সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততা থাকে। খালবিলের পানি কমে গেলে মাছ ধরা সহজ হয়, তাই কম দামে মাছ কিনে শুঁটকি বানানো যায়। বছরের বাকি সময় অন্য কাজে যুক্ত থাকলেও শীতের মৌসুমের আয় দিয়েই পরিবারের খরচ সারা বছর চালাতে হয়।
শোলপুর এলাকার প্রস্তুতকারক ভীম বিশ্বাস বলেন, ‘কম দামে দেশি মাছ কিনে শুঁটকি বানাই। মৌসুমি এই ব্যবসা আমাদের ভালো লাভ দেয়।’ একই এলাকার রহমান মোল্যা জানান, ‘এক মণ শুঁটকি তৈরিতে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। খরচ বাদে লাভ থাকে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।’
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে এসে কাজ করা কামরুল শেখ বলেন, ‘এখানে কই, চাঁদা, পুঁটি মাছের শুঁটকি বেশি হয়। কোনো রাসায়নিক ব্যবহার না করায় এর চাহিদা সবসময় দৃঢ়।’
মাইজপাড়া ইউনিয়নের শলুয়া গ্রামের অলোক বিশ্বাস জানান, ২৫ বছর ধরে মাচা তৈরি করে তিনি শুঁটকি উৎপাদন করছেন। তার পরিবারের আট সদস্য এ কাজে জড়িত। রাসায়নিকমুক্ত মানসম্মত শুঁটকি হওয়ায় দেশের বাইরেও এর চাহিদা আছে।
স্থানীয়দের মতে, শুঁটকি উৎপাদনকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। নারীরাও মাছ পরিষ্কার ও শুকানোর কাজে যুক্ত হয়ে আয় করছেন।
জেলা মৎস্য অফিস জানায়, জেলায় ৭৫টি পরিবার শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। এ বছর ৮০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, শুঁটকি উৎপাদন বাড়লে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, কারণ পাইকাররা জেলার বাইরেও এসব শুঁটকি সরবরাহ করে থাকেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নড়াইলের তিনটি উপজেলায় শীত মৌসুমে শুঁটকি তৈরি হয়। রাসায়নিকমুক্ত হওয়ায় এখানকার শুঁটকির চাহিদা বেশি। আমরা মানসম্মত উৎপাদনের জন্য প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’



