মহাস্থানগড়ে মিলল ৬০০ বছরের পুরোনো নিদর্শন
বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৭ এএম
বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় দুর্গনগরীতে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের যৌথ পরীক্ষামূলক খননে পাওয়া গেছে অন্তত ৬০০ বছরের পুরোনো ইটের তৈরি স্থাপনা, কূপ, মাটির থালা এবং বিপুলসংখ্যক পটারি। দুর্গনগরীর দক্ষিণের তাম্রদুয়ার এলাকায় খনন করে এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উদ্ধার করেন দুই দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক দল।
মহাস্থানগড় জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা জানান, বৈরাগী ভিটাসহ পুরোনো খনন এলাকায় ইটের স্থাপনা, কূপ, মাটির গুটিকা, নর্দান ব্ল্যাক পলিশড ওয়্যার (এনবিপিডব্লিউ), পোড়া মাটির ফলক ও পটারিসহ নানা নিদর্শন পাওয়া গেছে। ১০ নভেম্বর শুরু হওয়া চলতি খননে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে পটারি, যদিও অন্যান্য নিদর্শনও রয়েছে।
বাংলাদেশের এ কে এম সাইফুর রহমান ও রাজিয়া সুলতানা এবং ফ্রান্সের কলিন লিফ্রাঙ্কের নেতৃত্বে মোট সাতজন প্রত্নতাত্ত্বিক ছয়টি ট্রেঞ্চ খনন করেন। কলিন লিফ্রাঙ্ক জানান, খননে দুটি কূপ, মাটির গুটিকা, পুনর্ব্যবহারযোগ্য ইটের তৈরি মেঝে এবং বিপুলসংখ্যক পটারি পাওয়া গেছে। একটি ট্রেঞ্চ থেকে প্রায় অক্ষত একটি মাটির থালাও উদ্ধার হয়েছে।
লিফ্রাঙ্ক বলেন, এবার কিছু এনবিপি মিললেও সেগুলো মাটির উপরি ভাগে থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো অন্য স্থান থেকে এনে এখানে ফেলা হয়েছে। তিনি মনে করেন, মহাস্থানগড়ের বিস্তৃত সাইটে পরিকল্পিত খনন জরুরি, যাতে আরও গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ও সঠিক ইতিহাস উন্মোচিত হতে পারে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান জানান, পরীক্ষামূলক খননে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী খননের পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
খননে পাওয়া অধিকাংশ সামগ্রী সুলতানি আমলের হলেও আরও প্রাচীন ইট ও এনবিপিও পাওয়া গেছে, যেগুলো বহিরাগত উৎস থেকে এসেছে বলে প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা। রিং ওয়েল বা কূপগুলো খুব গভীরে নয়, বরং যে স্থানেই তৈরি হয়েছে সেখানেই পরিত্যক্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই খননে এখনো কোনো ধাতব নিদর্শন পাওয়া যায়নি; বেশির ভাগ সামগ্রী পাওয়া গেছে মাটির দুই মিটারের মধ্যেই। দেয়াল বা মেঝের সঙ্গে অন্য কাঠামোর সংযোগ রয়েছে কি না—এ প্রশ্নে খনন দল জানায়, পূর্ণাঙ্গ খনন না হওয়ায় নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে গাঁথুনির ধারাবাহিকতা দেখে অনুমান করা যায়, ট্রেঞ্চের বাইরে মাটির নিচেও কাঠামোর অংশ রয়েছে।
মহাস্থানগড়–দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন প্রত্নস্থল—এ অঞ্চলে আগের খননগুলোতে যিশুখ্রিষ্টের জন্মেরও বহু বছর আগের মাটির চুলা ও এনবিপিসহ অসংখ্য নিদর্শন পাওয়া গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, সাইটটি সঠিকভাবে খনন করা গেলে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে নতুন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উন্মোচিত হতে পারে।



