পাকুন্দিয়ার ইউএনও বিল্লাল এখনো ফ্যাসিস্টের তাবেদার : শহীদ সিফাতের পিতা
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০১ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ছাত্র জনতার আন্দোলনে রূপ নেয়া জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সিফাতুল্লাহর পিতা হাফেজ মাওলানা পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিল্লাল হোসেনকে ফ্যাসিস্টের তাবেদার বলে অভিযোগ করেছেন।
সিফাতের বাবা অভিযোগ করে আরও বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে গিয়ে আমার সন্তানসহ আরও অনেক নাম না জানা জনতা প্রাণ দিয়েছে কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে জুলাই আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হওয়া পরিবারগুলোর সদস্যরা প্রশাসনসহ রাজনৈতিক দলগুলোর চক্ষুশূল হচ্ছে বারবার।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে শহীদ হওয়ার পর জেলা প্রশাসক দেখা করেন তখন আমাদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা ও কৃষি কাজ করার জন্য খাস জমি থেকে ১০ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ দিতে বলেন, ইউএনও কে যা এখন অবধি আলোর মুখ দেখেনি। ইউএনও বিল্লাল ৫ তারিখের আগে ছাত্র জনতার উপর গুলির নির্দেশ দিয়েও এখন অবধি বহাল তবিয়তে পাকুন্দিয়া রাজত্ব করে চলেছে। রাস্তার বিষয়ে কথা বলতে ইউএনও বিল্লালের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে তার কক্ষ থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দেন। কিছুদিন আগে দুম্বার গোশত আসে যার বরাদ্দ কোথায় কিভাবে হয়েছে কেউ জানে না। সিফাতের স্মরণে একটি এতিমখানা রয়েছে তার জন্য বরাদ্দ চেয়েও পায়নি।
ইউএনও বিল্লাল পাকুন্দিয়াকে যেন তার নিজস্ব রাজ্য ঘোষণা দিয়ে সেখানে তার রাজত্ব কায়েম শুরু করেছেন। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ জেলা যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ রমজান তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে ইউএনও বিল্লালের সাথে আওয়ামীলীগের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দেন পরবর্তীতে এই স্ট্যাটাস ঘিরে তার উপর আসতে থাকে নানান হুমকি ধামকি।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে হাসান আহমেদ রমজান বলেন, ৫ তারিখে সরকার পতনের পরও হাসিনার আমলের ইউএনও এখনো বহাল তবিয়তে আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসনে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ইউএনও বিল্লালের কর্মকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে তার পক্ষ নিয়ে কয়েকজন আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়৷ প্রাণনাশের আশংকা সত্বেও আমি ইউএনও বিল্লালের দখলদারিত্ব, ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবো।
পাশের কটিয়াদিতে মানবিক ইউএনওর চিত্র দেখলেও পাকুন্দিয়ায় তার উল্টো চিত্র। ইউএনও বিল্লালের দোরগোড়ায় বারবার সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়েও খালি ফিরতে হয়েছে বুরুদিয়া ইউনিয়নের শারীরিক প্রতিবন্ধী মিজানের একই অভিযোগ একটি ঘরের জন্য আবেদন করে ব্যর্থ বৃদ্ধ তমিজউদদীন।
পাকুন্দিয়া উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক রাজিন সালেহ বলেন, আমরা জুলাই আন্দোলনে পাকুন্দিয়া নেতৃত্ব দিয়েছি সেসময় পাকুন্দিয়া এই ইউএনও ও এসিল্যান্ডের নির্দেশনায় আমাদের ছাত্রজনতার উপর গুলি ও হামলা করার নির্দেশ দিয়েছিল আবার তারাই বাদী হয়ে ছাত্রজনতার উপর মামলাও করেছে। অথচ ফ্যাসিবাদ সরকার দূর হলেও তারা এখনও বহাল তবিয়তে। ইউএনও বিল্লালের নেতৃত্বে বালুমহাল থেকে নিয়মিত চাঁদা উঠানো হচ্ছে যা পুরো কিশোরগঞ্জের ওপেন সিক্রেট।
এর আগে গত (৫ আগষ্ট) পাকুন্দিয়া উপজেলা হল কনফারেন্স রুমে উপজেলা প্রশাসন কতৃক "জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস" শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সে সময় পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিল্লাল হোসেন পক্ষপাত মূলক আচরণ করার অভিযোগ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন হামলার নির্দেশ দাতা ইউএনও'র বাধার মুখে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের আলোচনা সভা এনসিপির বয়কট করেছে। যা নিয়ে জাতীয় মিডিয়া গুলোতে সংবাদ প্রচার হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়।
এরপর কিশোরগঞ্জ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে ইউএনও'র পক্ষপাত মূলক আচরণে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছিলেন।পাকুন্দিয়া ইউএনও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে রিটানিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সকল অপকর্ম চালিয়ে গিয়েছেন। সারা বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় হাসিনার নিয়োগকৃত কোন ইউএনও এসিল্যান্ড স্বপদে নেই অথচ পাকুন্দিয়া উপজেলার ইউএনও ও এসিল্যান্ড জুলাই আন্দোলনে ছাত্র জনতার উপর হামলার জন্য প্রকাশ্যে গুলির নির্দেশ দিয়েছেন। এবং ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এই ইউএনও এহেন কোন খারাপ কার্যক্রম নেই সে করে নাই। বাদী হয়েও হাসিনার পতনের পরও তারা ঠিকই স্বপদে বহাল রয়েছে।
তখন তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আঁতাত করে বালুরঘাট দখল, হাট দখল সরকারের ন্যায্য ইজারা থেকে সরকারকে বঞ্চিত করে কোটি টাকার বালুরঘাট নামমাত্র ইজারা দিয়ে সরকারকে বঞ্চিত করে নানান কর্মকাণ্ডের সাথে সে লিপ্ত। কিসের প্রভুত্বের ইশারায় এখনও বহাল তবিয়তে। বাংলাদেশের সকল ইউএনও এসিল্যান্ড পরিবর্তন হলেও পাকুন্দিয়া কোন পরিবর্তন দেখি নাই। ইউএনও সৈরাচারের দোসর আখ্যায়িত করে অনতিবিলম্বে তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানান। সৈরাচারের দোসরদের রেখে এদেশের বিজয় আনন্দ উৎসব মুখর হবে না।
এর আগে গত (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া সদর ঈদগাহ মাঠে উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ভিপি নূর পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, শুনেছি ইউএনও সাহেব নাকি অনুমতি বিহীন গণহত্যাকারী ছাত্র জনতার উপর হামলাকারী আসামিকে বালু উত্তোলনের ব্যবসা টেন্ডার দিয়েছেন,অতিত থেকে শিক্ষা নিন এর ফল কিন্তু ভালো হয়না। এরপর জেলাজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
এর আগে গত (৪ জানুয়ারি) পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আমিনুর রহমান ভূইয়া এমাদ মিয়ার ৪৩ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম পাকুন্দিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিল্লাল হোসেনকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ইউনো সাহেব ভালো হইতে পয়সা লাগেনা,৫ তারিখের পর আমরা ধৈর্য্য দরে আছি,আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র করবেন- ধৈর্যের একটা সীমা আছে ইউনো সাহেব,সীমা লংঘন করবেন না।
দীর্ঘ ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রামের পর হাসিনাকে তাড়াইলাম। হাসিনা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন বলেছিলাম এই যে এসপি ডিসি ইউনোদেরকে রেখে হাসিনা ঠিকই হেলিকপ্টার দিয়ে পালিয়ে যাবে তখন আপনারা যাইবেন কই? কিন্তু আজকে ওই ভাবে বলবো না তবে ইউনো সাহেব ভালো হইতে পয়সা লাগে না। বিগত ১৭ বছর অনেক অত্যাচার অনেক নির্যাতন নিপীড়ন আমরা সহ্য করেছি আপনাদের ভেঙচি দাঁত দেখার জন্য না। পরিষ্কার যেটা ন্যায় ন্যায়ের পক্ষে থাকবেন। আর আওয়ামী লীগের যদি দালালি করতে মন চায় তাহলে এখান থেকে রিজাইন দিয়ে নিজে অন্য জায়গায় চলে যাবেন।
এই পাকুন্দিয়া কিন্তু আন্দোলনের জায়গা এই পাকুন্দিয়া বাসী কিন্তু কাউকে ছাড়ে না হাসিনা কেউ ছাড়ি নাই আমরা। সেই কারণেই পাকুন্দিয়া বসে পাকুন্দিয়ার উপরে এই ১৭ বছরে অনেক খুন অনেক জেল অনেক রক্ত কিন্তু তারপরও ৫ আগষ্টের পর আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া নির্দেশ দিয়েছেন যে বিগত ১৭ টি বছর আমাদের নেতা কর্মীদের বাড়িঘর লুটপাট করে নিয়েছে দখল করেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে স্কুল কলেজে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে নাই। অনেক শিক্ষিত যুবক চাকরি পায় নাই অনেকেই চাকরি হারিয়েছে কিন্তু ধৈর্যের একটি সীমা আছে ইউনো সাহেব! ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েন না যেটা ন্যায় ন্যায়ের পথে থাকবেন অন্যায় ভাবে যদি আওয়ামী লীগকে কিছু করতে চান তাহলে আওয়ামী লীগকে যেভাবে বিদায় করেছি আপনাকেও সেভাবে বিদায় করবো।
এর আগে, গত বছরের ১১ নভেম্বর ২০২৪ ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইসরাত জাহান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বিল্লাল হোসেন কে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে বদলি করা হয় এবং গাজীপুর জেলা কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব এম এ মুহাইমিন আল জিহান কে পাকন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীত প্রজ্ঞাপনে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় যোগদান বাতিল করে পাকুন্দিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসারের পূর্বের দায়িত্ব পালনে আদেশ দেওয়া হয়।
পাকুন্দিয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে মো. বিল্লাল হোসেন শেখ হাসিনা সরকার আমলে পাকুন্দিয়া যোগদান করেন। এর আগে তিনি রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৩৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে মোঃ. বিল্লাল হোসেন চাকুরিতে যোগদান করেন। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির ক্ষমতা বলে তিনিই দায়িত্বে থেকে সৈরাচার হাসিনার সরকারের ঠিকাদারদের প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যস্ত তিনি।
এসব অভিযোগ নিয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার ইউএনও বিল্লাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোনে সাড়া দেননি। পরবর্তীতে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে বলেন, কিশোরগঞ্জে অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত আছেন। তখন তার বক্তব্য প্রয়োজন বলে সাংবাদিক প্রতিবেদক উল্লেখ করলে তিনি কি বিষয়ে বক্তব্য তা না জেনে বা শুনে বলেন ‘অবৈধভাবে কোন অবস্থাতেই বালু উত্তোলন করার সুযোগ নেই। কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে'। পুনরায় প্রতিবেদক তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠায় যে এই জাতীয় বক্তব্য প্রয়োজন নেই আমাদের বক্তব্যের বিষয় অন্য টা তখন ইউএনও বিল্লাল বলেন রাতে কল দেয়ার জন্য।



