Logo
Logo
×

সারাদেশ

৩৮ দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণের সুযোগ বাংলাদেশিদের

Icon

অনলাইন ডেস্ক :

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪১ পিএম

৩৮ দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণের সুযোগ বাংলাদেশিদের

ছবি : সংগৃহীত

বিদেশে পড়তে যেতে লম্বা সময় ধরে চেষ্টা করেছেন, পেয়েছেন স্কলারশিপও। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যেতে পারেননি ভিসা পাননি বলে। এমন ঘটনা ঘটেছে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গেই। তেমনই একজন তানজুমান আলম ঝুমা।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে হাঙ্গেরি আর যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। পেয়েছেন স্কলারশিপও। কিন্তু শুধু ভিসা জটিলতার কারণে যেতে পারেননি দুই দেশের কোনোটিতেই।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, অক্টোবরে বুদাপেস্টে অ্যাপ্লাই করি। জানুয়ারিতে ওটা আমার জন্য ‘নো’ হয়ে আসে। পরে জানুয়ারিতে ইউএসের জন্য অ্যাপ্লাই করি। মোটামুটি গত বছর অক্টোবর থেকে এই নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় এক বছরের বেশি সময় আমার এর পেছনে চলে গেছে

শুধু শিক্ষার্থী ভিসাই না, বহুদেশ ঘোরা ব্যক্তি কিংবা কাজের জন্যে শ্রমিক ভিসাও সহজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে।

এমনকি ভিয়েতনাম কিংবা ইন্দোনেশিয়ার মতো যে দেশগুলো থেকে সহজেই ভিসা পাওয়া যেত এতদিন, তারাও অনেক ক্ষেত্রে ভিসা দিচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।

অথচ ভারতের পর্যটন ভিসা ছাড়া কার্যত কোনো দেশ থেকেই বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভিসার অপব্যবহার করে একদেশ থেকে অন্যদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে কমেছে বিশ্বাসযোগ্যতা।

এছাড়াও দেশের বাইরে রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রকাশ্য বিবাদে জড়ানোর কারণেও নষ্ট হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি।

এক্ষেত্রে পাসপোর্টের র‍্যাংকিংয়ে নিচে নেমে যাওয়াও একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে বলেও মনে করছেন অনেকে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সবার আগে দেশের ভেতরে দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছেন বিশ্লেষকরা। একইসাথে কূটনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানেরও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

কোন দেশগুলো ভিসা দিচ্ছে না?

কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা না থাকার পরও বাংলাদেশিদের ভিসা দিচ্ছে না বেশ কয়েকটি দেশ।

বিদেশে পড়তে, কাজ করতে কিংবা বেড়াতে যেতে আগ্রহীদের অনেকেই জানিয়েছেন এমন অভিযোগ। একই সমস্যার কথা জানিয়ে পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, দেশগুলো ভ্রমণসহ অনেক ধরনের ভিসা দিচ্ছে না।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, ইন্ডিয়া, ইউএই, কাতার, বাহরাইন, ওমান, উজবেকিস্তান, সৌদি আরব, ভিয়েতনাম- এই সব দেশ আমাদের ভিসা দিচ্ছে না। শুধু তাই নয়, থাইল্যান্ডের ভিসা অনেক বেশি সময় নেয়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার ভিসার রেশিও কম। ফিলিপাইন অনেক বেশি সময় নেয়। ইন্দোনেশিয়ার ভিসা ফি অনেক। এমনকি অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া শ্রীলংকার ইলেক্ট্রনিক ভিসা হতেও সময় নিচ্ছে দুই-তিন দিন।

২০২৪ সালের ৫ আগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটন ভিসা বন্ধ করে দেয় ভারত।

দেশটির এ সিদ্ধান্তকে অনেকটা রাজনৈতিক হিসেবে দেখা হলেও ঘোষণা ছাড়াই ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ এশিয়ার অনেক দেশ থেকে সব ধরনের ভিসা পাওয়াই কঠিন হয়ে উঠেছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতগুলো দেশের ভিসা নিয়ে এমন জটিলতা খুব বেশিদিনের না।

এ নিয়ে পর্যটন ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন সেলিম জানান, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছরই বাংলাদেশিদের জন্য পাঁচ থেকে ছয় লাখ ভি১, ভি২ ভিসা দিয়ে থাকে। কিন্তু এই বছর দেশটির দূতাবাসমনে হয় না দুই লাখের বেশি ভিসা দিয়েছেবলে মন্তব্য করেন তিনি

তিনি বলেন, ইউএস বলেন, অস্ট্রেলিয়া বলেন বা কানাডা কিন্তু ২০২৩-২৪ সালে আমাদের অনেক ভিসা দিয়েছে- পাসপোর্টের মেয়াদ যতদিন, ততদিন পর্যন্ত দিয়েছে। কিন্তু এ বছর কিন্তু কোনো ভিসা দিচ্ছে না।

কেন ভিসা দিচ্ছে না?

ভিসা জটিলতার কারণ হিসেবে অনেকেই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে কারণ হিসেবে মনে করলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মূল আরও গভীরে।

তাদের মতে, অনিয়মিত পথে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন দেশে ঢোকার প্রবণতা, আর তা করতে সহজলভ্য দেশের ভিসা নিয়ে অন্যদেশে পাড়ি জমানোর ঘটনা দেশগুলোর প্রশাসনের চোখে পড়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ভিসা পাওয়ার সুযোগে বা এটাকে অপব্যবহার করে অনেকে কিন্তু অনিয়মিতভাবেও যাচ্ছে। এবং সে প্রবণতার কারণেই আমার ধারণা যে দেশগুলোতে খুব বেশি অভিবাসনবিরোধী বাতাবরণ নেই সেই দেশগুলোও কিন্তু এখন সতর্ক হচ্ছে। যেমন ধরুন ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড।

এমনকি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভ্রমণ ভিসায় বিদেশে লোক পাঠিয়ে শ্রমিক ভিসায় রূপান্তর করেন বলেও অভিযোগ আছে।

আবার প্রতিবেশী দেশ থেকে বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা ভিসা নিয়ন্ত্রণের কারণে ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু দেশ আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

যার কারণে অল্প সংখ্যক মানুষের 'অনিয়মিত' বা আইন বহির্ভুত কাজে যুক্ত থাকার ফল অনেক বেশি সংখ্যক মানুষকে ভোগ করতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

একইসঙ্গে সেসব দেশে গিয়ে প্রকাশ্যে কোন্দল বা বিবাদে জড়ানোর ঘটনাও দেশের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যার প্রকাশ দেখা যাচ্ছে নানা দেশের ভিসা জটিলতায়।

ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে পাসপোর্টের র‍্যাংকিংয়ের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক নাগরিকত্ব ও পরিকল্পনা বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের তথ্যমতে, দুর্বলতম পাসপোর্টের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।

বিশ্বের ৩৮টি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণের সুযোগ আছে বাংলাদেশের নাগরিকদের। এ তালিকার বেশিরভাগ দেশই আফ্রিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের, যেখানে বাংলাদেশিদের যাতায়াতের প্রবণতাও কম।

এছাড়াও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় অবৈধ অভিবাসনের সুযোগ খোঁজার প্রবণতা বেড়েছে।

সমাধান কি আছে?

গত বছর ডিসেম্বরে ভারতের ভিসা সীমিত থাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে অন্য দেশে সরাতে কূটনীতিকদের অনুরোধ জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

তিন মাস পর মার্চ মাসে ঢাকা থেকেই নয়টি দেশের ভিসা প্রক্রিয়া শুরু হয়, কিন্তু সেই দেশগুলো থেকেও ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা যাচ্ছে।

কয়েক মাস আগে সংবাদমাধ্যমে ভিসা জটিলতার কথা স্বীকার করে নেন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা। দায়ী করেন, বাংলাদেশিদের কর্মকাণ্ডকে।

কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারকে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের ভ্রমণ ভিসার ক্ষেত্রে জটিলতার বিষয়টি পুরোপুরি রাজনৈতিক। সেক্ষেত্রে নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত পরিস্থিতি বদলানোর সুযোগ নেই।

তবে ভারত ছাড়া অন্য দেশগুলোতে কূটনৈতিকভাবে উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ আছে।

সেক্ষেত্রে অসৎ উপায়ে যারা দেশের বাইরে লোক পাঠাচ্ছেন কিংবা যারা যাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির।

তিনি বলেন, ডমেস্টিক জায়গায় (দেশের ভেতরে) হাত দিয়ে সেখানে যথোপযুক্ত আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধানের চেষ্টা করছি- এটা যদি দৃশ্যমান করতে পারি, তাহলে আমার ধারণা ভিসা প্রক্রিয়ার এই বাড়তি জটিলতা আমরা এই সাম্প্রতিককালে যা দেখছি সেটা থেকে হয়তো বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন