সন্ধ্যা নামতেই স্কুল প্রাঙ্গনে বসে জুয়া-মাদকের আসর
কিশোরগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম
ছবি : সন্ধ্যা নামতেই স্কুল প্রাঙ্গনে বসে জুয়া-মাদকের আসর
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়গুলো হয়ে উঠছে অনিরাপদ ও অরক্ষিত। অনেক বিদ্যালয়ে সন্ধ্যা হলে অবাধে বহিরাগতদের প্রবেশ, বখাটে ছেলেদের আড্ডা ও মাদকের আসর চলছে হর-হামেশাই। বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোতে জমে এসব বখাটে মাদকসেবীদের আড্ডা। বখাটেরা আড্ডা ও মাদকসেবনের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল চুরি করে নিয়ে গেলেও নেই প্রশাসনের তেমন নজরদারি। এতে অনেকটা নিরুপায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার স্বল্প যশোদল দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে এমনি অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানায়, বিদ্যালয়টি ছুটি হওয়ার পর সন্ধ্যার পরপরই শুরু হয় বখাটেদের আড্ডা ও মাদকসেবন। প্রতিদিনই বখাটে মাদকসেবীরা বিদ্যালয়ের মাঠ, বারান্দা ও ছাদে মাদকের আসর বসাচ্ছে। তারা রাতভর মাদক সেবন ও বিক্রি কার্যক্রম করে। স্থানীয়রা তাদের কাছে অসহায়। মাদকসেবী ও বখাটেদের এমন তান্ডব অস্বস্তিকর। তারা মাদক সেবনের পর গভীর রাতে আশপাশের বাড়িতে ঢুকে মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়।
মাদকের এমন সহজলভ্যতার কারণে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া তরুণেরাও আশঙ্কাজনকভাবে মাদকের দিকে ঝুঁকছে। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় গাঁজা থেকে শুরু করে বাংলা মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নানা রকম মাদক সেবন ও কেনাবেচা হচ্ছে। অভিজাত পরিবারের অনেক সন্তান এ মাদকের নেশায় ভয়াবহ রকম আসক্ত। প্রশাসনের সঠিক নজরদারি না থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করছেন কয়েকজন অভিভাবক।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) সরজমিনে সদর উপজেলার স্বল্প যশোদল দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে দুটি ভবন রয়েছে। আশপাশে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামাদি পড়ে আছে। পাশাপাশি মাদক সেবনকারীদের বসার জন্য খড় বিছানো রয়েছে বিদ্যালয়ের পিছনে।
চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী নিলা আক্তার বলেন, প্রায় সময় স্কুলের বারান্দায় খালি বোতল ও সিগারেটের সুকা পড়ে থাকতে দেখা যায়। এতে খুবই খারাপ লাগে আমাদের।
স্থানীয় ব্যবসায়ী কালার বাপ বলেন, মাদকের সহজলভ্যতায় এখানে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে কিংবা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও বিক্রি হয়। মাদকাসক্তদের কারণে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। স্কুলের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের টহল খুবই প্রয়োজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদকসেবীর বাবা বলেন, তাঁর ছেলে নেশাগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে পরিবারে সব সুখ নষ্ট হয়ে গেছে। শত চেষ্টা করেও তাকে নেশার জগৎ থেকে ফেরানো যায়নি। পুলিশ ছিঁচকে মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার করলে মাদক নির্মূল কখনো সম্ভাবনা নয়। যাদের আশ্রয়ে এসব মাদক বিক্রি হয়, তাদের গ্রেপ্তার করলে মাদক নির্মূল সম্ভব।
স্থানীয় বাসিন্দা রাবুল বলেন, সন্ধ্যা হলে স্কুল প্রাঙ্গনে বসে বখাটে ছেলেদের আড্ডা ও মাদকের আসর। প্রশাসন স্বপ্রণোদিত হয়ে কখনও এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালায় না। কেবল আমরা ফোনে খবর দিলেই তারা আসে। অনেক সময় খবর পেয়েও আসে না।
স্বল্প যশোদল দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওসমান গণি বলেন, বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান উন্নয়ন, ছাত্র ছাত্রী বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন সহ সার্বিক উন্নতির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি। বিদ্যালয়টি এলাকার সম্পদ। তবে, দুঃখের বিষয় রাত হলেই বিদ্যালয়টি বখাটেদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়। প্রতিদিন সকালে যখন বিদ্যালয়ে আসি, তখন দেখতে পাই বিদ্যালয়ের ভবন, বারান্দায় ও ছাদে ময়লা আবর্জনা ও বিভিন্ন বস্তুর উচ্ছিষ্ট। তিনি এলাকাবাসী সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপও কামনা করেন।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ সুলতান রাজন বলেন, মাদক সেবন ও বিক্রি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অনেক বাসিন্দা তাঁর কাছে এসব অভিযোগ নিয়ে আসেন। মাদক কারবারি ও সেবনকারীদের প্রতিরোধ করা না হলে মাদক নামক বিষবৃক্ষ একসময় ডালপালা মেলে মহীরুহে পরিণত হবে। মাদকের অপব্যবহার রোধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুন নাহার মাকছুদার সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, এটা অনাকাঙ্খিত বিষয়। ছুঁটির পর অনেক বিদ্যালয়ের পরিবেশটা নিরিবিলি হয়ে যায়। বিষয়টি এর আগে কেউ জানাননি। পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে অবগত হয়েছি। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির লোকদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেসব বিদ্যালয়ে এমন সমস্যা আছে ওখানে মাঝেমধ্যে আমাদের পুলিশি টহল দেয়া হবে। মাদকের সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।



