অকেজো ল্যাম্পপোস্ট নিজ উদ্যোগে মেরামত করে প্রশংসায় ভাসছেন যুব অধিকার পরিষদ
কিশোরগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৫ পিএম
ঢাকা নরসিংদী হতে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় প্রবেশ পথে পুটিয়া বটতলা বাজারের টোক কাপাসিয়া, ও কটিয়াদি নিকলী রোডের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের পাশে বসানো সৌরবাতি অকেজো হয়ে পড়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অধিকাংশ বাতি অকার্যকর হয়ে গেছে। কোনো কোনো স্থানে শুধু ল্যাম্পপোস্ট দাঁড়িয়ে আছে, আবার কোথাও কোথাও বাতি থাকলেও আলো জ্বলে না। গত বছরের ৫ আগস্টের পর বেশিরভাগ বাতিই চুরি হয়ে গেছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বসানো বাতিগুলো বিকল অবস্থায় পড়ে থাকায় কোনো কাজেই আসছে না। এতে বিভিন্ন জায়গায় অন্ধকারে মাদক, দুর্নীতি ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে শিক্ষিত ও দক্ষ যুব সমাজকে কল্যাণমূলক কাজে স্বেচ্ছা অংশগ্রহণে উৎসাহীত করে পথচারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিজস্ব অর্থে ল্যাম্পপোস্ট মেরামত করার কাজ হাতে নিয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলা যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ রমজান। তিনি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে নিজস্ব পরিসরে সাজিয়েছে নিজস্ব দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পভিত্তিক কর্মসূচি। যা উপযুক্ত সময় ও আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত করে যাচ্ছে। এতে উপজেলাজুড়ে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে পাকুন্দিয়া উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়নের পুটিয়া বটতলা বাজারের কয়েকটি নষ্ট সৌরবাতি নিজ উদ্যোগে মেরামত করেন হাসান আহমেদ রমজান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পাকুন্দিয়া উপজেলা ও বুরুদিয়া ইউনিয়ন, গণঅধিকার পরিষদ ও যুব অধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দরা।
জানা যায়, বিগত সরকার দেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘গ্রাম হবে শহর’ এই স্লোগানকে বাস্তবায়ন করতে কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলাকে আলোকিত করতে শত শত সৌর ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করেন স্থানীয় সরকার প্রতি আলোর সৌর ল্যাম্পপোস্ট সরকারের খরচ হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা। আলোর সৌর ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয় উপজেলা সর্বস্তরের জনগণের উপকারার্থে, অন্ধকারে সড়কে কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে। হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা-মসজিদ ও মন্দিরে চুরি ডাকাতি যে কোনো দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সৌর আলোর ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কিছু দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি বিগত সরকারের আমলে সরকারের লাখ লাখ টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। পাকুন্দিয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আলোর সৌর ল্যাম্পপোস্ট অকেজো হয়ে আছে। উপজেলা সড়কের বেশ কয়েকটি আলোর ল্যাম্পপোস্ট অকেজো হয়ে আছে। নিম্নমানের সৌর প্যানেল ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ ব্যবহারের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সৌরবাতিগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের কথা থাকলেও তা সঠিকভাবে করা হয়নি। নিম্নমানের যন্ত্রাংশ সংযোজন করে একটি সিন্ডিকেট বরাদ্দকৃত অর্থের বড় অংশ আত্মসাৎ করেছে। অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অধিকাংশ বাতি ও বাতির কেবল চুরি হয়ে যাওয়ায় এগুলো আর জ্বলছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে রাস্তায় বাতি থাকলেও আলো নেই। এই অন্ধকারেই প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ। উপজেলার বাইপাস প্রবেশপথ থেকে শুরু করে মহাসড়কের অধিকাংশ সৌরবাতিই অকেজো। কয়েকটি জায়গায় খুঁটিগুলো দাঁড়িয়ে থাকলেও বাতিগুলো উধাও হয়ে গেছে। কয়েকশ বাতি বসানো হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দীর্ঘদিন ধরেই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা অনন্য পরিবহনের বাসচালক আসলাম মিয়া বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে লাইট না থাকার কারণে প্রতিদিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। অন্ধকারে ঠিকমতো পথ দেখা যায় না যা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
স্থানীয় বাসিন্দা আবিদ হোসেন বলেন, নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহারের কারণে লাইটগুলো অকেজো হয়ে গেছে। রাত হলেই রাস্তার দুই পাশে নেমে আসে ঘন অন্ধকার যা অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বারবার অভিযোগ জানানো হলেও কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে রাস্তার ত্রুটি ও অব্যবস্থাপনা। পাকুন্দিয়া উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়নের পুটিয়া বটতলা বাজারের লাইটগুলো দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এতে গাড়ি চালকদের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। পথচারীরাও ছিনতাইয়ের কবলে পড়ছেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ রমজান বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই সোলার লেম্পপোষ্ট প্রকল্পটি ভালো ছিলো কিন্তু লেম্পপোষ্ট প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে নিন্মমানের মালামাল দিয়ে ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করার ফলে কিছু দিনের মধ্যে অকার্যকর হয়ে গেছে। দেশের বেশিরভাগ ল্যাম্পপোস্ট বিভিন্ন জায়গায় অন্ধকারে চুরি ডাকাতিসহ মাদক কারবারিদের আনা গুনা বেড়ে গেছে, তাই বাজারের ব্যবসায়ী ও পথচারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিজস্ব অর্থে ল্যাম্পপোস্ট মেরামত করার কাজ হাতে নিলাম দেশ বাসীর কাছে দোয়া চাই আমার এই জনসেবা যেন চলমান রাখতে পারি।
এ প্রসঙ্গে পাকুন্দিয়া উপজেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনিমুল হক বলেন, ৫ আগস্টের পর বেশিরভাগ বাতিই চুরি হয়ে গেছে। বর্তমানে কোনো বরাদ্দ নেই। খুব দ্রুতই বাতিগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সৌর বাতিগুলো বন্ধ থাকায় অপরাধীরা সুযোগ নিচ্ছে। সৌরবাতিগুলো চালু থাকলে পুলিশের কাজ করতেও সুবিধা হতো।



