Logo
Logo
×

সারাদেশ

ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি

Icon

জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫০ এএম

ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি

ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে জামালপুর জেলার বিভিন্ন চর এলাকায় বিলীন হচ্ছে অসংখ্য বাড়িঘর, আবাদি জমি ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। ইতোমধ্যে শত শত পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে, হুমকির মুখে রয়েছে আরও বহু বাড়িঘর, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি স্থাপনা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান জানান, জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর ও মাদারগঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর ৯৩ কিলোমিটার তীরের মধ্যে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে তীব্র ভাঙন। এর মধ্যে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অরক্ষিত বাকি ১০ কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি মাত্রায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

তিনি জানান, খোরাবাড়ি চরের উজান থেকে সানন্দবাড়ি হয়ে মৌলভীবাজার পর্যন্ত এলাকাগুলোতে ভাঙন সবচেয়ে তীব্র। ইতোমধ্যে মুন্নিয়ার চর, প্রজাপতির চর, চরকাছারি দুয়া, খোরাবাড়ি ও কাছের দহ এলাকায় বহু বসতি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

স্থানীয় সাংবাদিকদের তথ্যমতে, গত ৩০ বছরে জামালপুর জেলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ৬ লাখ মানুষ। শুধু গত এক বছরেই ইসলামপুর উপজেলায় বাড়িঘর হারিয়েছেন অন্তত ৩০০ পরিবার; ভাঙনের ভয় এড়াতে রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ।

পাউবোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভাঙনরোধে ব্রহ্মপুত্র ও জিঞ্জিরাম নদীর ১৩ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণের জন্য প্রায় ৫৫৮ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া আরও ১ হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে, যা ১৫ কিলোমিটার নদীতীর স্থায়ীভাবে সুরক্ষায় সহায়ক হবে।

তবে স্থায়ী উদ্যোগ না আসায় স্থানীয়রা নিজেরাই ভাঙনরোধে নেমেছেন। ইসলামপুরের মুন্নিয়ার চরবাসী মুন্নিয়া যুব সংগঠন নামে সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে চাঁদা তুলে নদী প্রতিরোধের কাজ শুরু করেছেন। স্থানীয় যুবক মো. রুবেল রানা জানান, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দ্বারে গিয়েও কোনো ফল হয়নি। তাই সবাই মিলে চাঁদা তুলে নিজেরাই কাজ করছি। কেউ বাড়িপ্রতি এক হাজার টাকা দিয়েছে, প্রবাসীরা দিয়েছেন এক মাসের বেতন।

তিনি আরও বলেন, মাত্র তিন-চার মাস আগেই বন্যার সময় অন্তত ৫০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। আমাদের প্রায় ৩ বিঘা জমি নদীতে গেছে।

ইসলামপুরের প্রজাপতির চর এলাকার নৌযানচালক মো. জুয়েল বলেন, আমাদের পরিবারের ২০ বিঘা আবাদি জমি নদীতে চলে গেছে। সেখানে আগে ধান, মরিচ, ভুট্টাসহ নানা ফসল হতো। এখন জমির জায়গায় পানি। তার কাছে থাকা তালিকা অনুযায়ী, প্রজাপতির চরের অন্তত ২৫ জনের জমি ৪ বিঘার বেশি নদীতে বিলীন হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ভাঙনে এখন পর্যন্ত ৫-৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠান, ৭টি মহিলা মাদ্রাসা এবং ১২-১৩টি মসজিদ নদীগর্ভে চলে গেছে। আরও বহু স্থাপনা হুমকির মুখে।

পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, নদীর পানি কমে যাওয়ায় ভাঙনের গতি বেড়েছে। ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন এখন জরুরি। সঠিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া গেলে ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জের ভাঙনকবলিত জনপদগুলো রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে আশা তাদের।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন