Logo
Logo
×

সারাদেশ

অচল নাকুগাঁও স্থলবন্দর

এক দশকেও কার্যকর হয়নি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য, বেকার শত শ্রমিক

Icon

শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০১:০২ পিএম

এক দশকেও কার্যকর হয়নি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য, বেকার শত শ্রমিক

ঢাকঢোল পিটিয়ে ২০১৫ সালের জুনে যাত্রা শুরু করেছিল শেরপুরের নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও স্থলবন্দর। প্রায় সাড়ে ১৩ একর জমির ওপর নির্মিত এই বন্দরের মাধ্যমে ভারত ও ভুটান থেকে ১৯টি পণ্য আমদানির অনুমতি থাকলেও বাস্তবে কার্যক্রম সীমিত রয়েছে কেবল পাথর আমদানিতেই। অর্থনৈতিকভাবে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি বন্দরটি।

বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ১৯৯৭ সালে নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী নাকুগাঁওয়ে শুল্ক বন্দরের কাজ শুরু হয়। পাঁচ বছর পর ২০০২ সালে পাথর ও কয়লা ছাড়া সব পণ্যের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০০৯ সালে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা এবং ২০১১ সালে অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় অবকাঠামো, পাশাপাশি নাকুগাঁও থেকে নকলা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়কও উন্নত করা হয় আড়াইশ কোটি টাকায়।

তবে এসব উদ্যোগের সুফল মেলেনি। বন্দর দিয়ে আমদানিযোগ্য ১৯টি পণ্যের তালিকা থাকলেও কার্যক্রম কেবল পাথরেই সীমাবদ্ধ। রাজস্ব আদায়ের হিসাবেও তা স্পষ্ট— ২০২১-২২ অর্থবছরে আদায় হয়েছিল ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০২২-২৩ সালে কমে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৭৫ লাখে, আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা নেমে আসে মাত্র ৭১ লাখ টাকায়। ২০২৪ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বন্দর কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে, ফলে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব হিসাবও দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিরাট সুযোগ থাকলেও কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে সেটি কাজে লাগানো যায়নি। পাথর ছাড়া অন্য কোনো পণ্য বাণিজ্যের অনুমতি কার্যকর না থাকায় অনেক ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে গাবরাকুড়া, কড়ইতলা ও কামালপুর স্থলবন্দরে ব্যবসা সরিয়ে নিচ্ছেন।

বন্দরের শ্রমিকরাও পড়েছেন চরম সংকটে। নাকুগাঁও শ্রমিক ইউনিয়নে নিবন্ধিত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৮০০, আর দৈনিক হাজিরাভিত্তিক শ্রমিক রয়েছেন আরও হাজারের বেশি। একসময় দিনে তিন-চারশো টাকা আয় করা নারী শ্রমিকরা এখন কাজ না পেয়ে বেকার। স্থানীয়রা বলছেন, বন্দর সচল হলে অন্তত দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হতো।

বন্দরের ব্যবসায়ী ছাইফুল ইসলাম বলেন, পাথর ছাড়া অন্য কোনো পণ্য আনতে পারি না। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ভুটানের গাড়ি আটকে রাখে, ফলে তারাও ব্যবসায় আগ্রহ হারিয়েছে। পরিবহন খরচও বেড়ে যায়। শুল্ক কমালে হয়তো আমরা আবার বিনিয়োগ করব, না হলে এই বন্দর দিয়ে ব্যবসা টিকবে না।

শেরপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আরিফ হোসেন বলেন, আমাদের বন্দর থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে আসামের জাগির রোডে এশিয়ার সবচেয়ে বড় শুঁটকির হাট। দেশে চাহিদা থাকলেও তা আমদানি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। অনুমোদিত পণ্যগুলো চালু হলে নাকুগাঁও দেশের অন্যতম সক্রিয় বন্দর হতে পারত।

সম্মিলিত নাগরিক উদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিম চাঁন বলেন, বন্দরটি মুখ থুবড়ে পড়ায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, শ্রমিকরা বেকার হচ্ছে। বন্দর, এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের একসঙ্গে বসে দ্রুত সমাধান বের করতে হবে।

শেরপুর কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ব্যবসায়ীরা চাইলে নতুন পণ্য আমদানির অনুমোদন ও আইনগত সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত।

এক দশক পেরিয়ে গেলেও নাকুগাঁও স্থলবন্দর আজও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। ফলে শেরপুরের সীমান্ত ঘেঁষা এই বন্দরটি এখন সম্ভাবনার চেয়ে বেশি উদাসীনতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন