নভেম্বরের অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে রাজশাহীতে ১০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪১ পিএম
‘বাজারে মুলা তোলার আগেই সব শেষ হইয়া গেল—এই যে জমি, এখন শুধু পানি আর পানি।’ কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামের কৃষক রাব্বানী মন্ডল। গতকাল শুক্রবার সকালে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন নিজের পানিতে তলিয়ে যাওয়া জমির সামনে। চোখের কোণে পানি, পায়ের নিচেও হাঁটুসমান পানি—যে জমিতে কিছুদিন আগেও সবুজ মুলার গাছ দুলছিল, সেখানে এখন শুধু থৈথৈ জল।
নভেম্বরের শুরুতেই অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, বাগমারা, তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার ফসলের মাঠগুলোতে দেখা দিয়েছে একই চিত্র। টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে জেলার হাজারো কৃষক এখন বড় ক্ষতির মুখে। শাকসবজি থেকে ঢ্যাঁড়স, মুলা, পেঁয়াজ—এমনকি আমন ধান পর্যন্ত কোনো ফসলই রেহাই পায়নি।
কৃষি বিভাগের হিসাবে, জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৪ হাজার ২০০ জন। তবে স্থানীয় কৃষকদের ধারণা, বাস্তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি। তাঁরা বলছেন, ১৯৮৬ সালের পর নভেম্বরে এমন বৃষ্টি আর দেখেননি।
পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামে দেখা গেল, সবখানে একই দৃশ্য। কোথাও ধান হেলে পড়েছে, কোথাও শাকসবজি ডুবে আছে পানিতে। কৃষক রাব্বানী মন্ডল বলেন, আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যেটা এবার হইছে। এখনো পানি নামেনি। আমার ৫ বিঘা জমি পুরোপুরি পানির নিচে। চারপাশে পুকুর, পানি নামার পথ নাই। সরকার যদি পাশে থাকে, তাহলে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব; তা না হলে কঠিন হবে।
পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ১২ কাঠা জমিতে শাকসবজি করেছিলাম, বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। এমন সময় তো বৃষ্টি হয় না। একই এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক ১ বিঘা জমিতে বি৮৭ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। কাটার আগেই জমিতে পানি উঠে ধানের গাছ হেলে পড়েছে। তাঁর ছেলে সোহানুর রহমান বলেন, অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে যাবে। শ্রমিক খরচও বেশি হবে। মনে হচ্ছে খরচের টাকাও উঠবে না। তিন দিন পর বৃষ্টি হইলে এই সর্বনাশ হতো না।
পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এম এ মান্নান বলেন, নভেম্বরের শুরুতে হওয়া এই বৃষ্টি নিম্নচাপের কারণে হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনা মূল্যে সার ও বীজ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, কৃষকদের মাঠ শুকিয়ে দ্রুত নতুন ফসল রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, জেলার ফসলের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, প্রণোদনা এলে তা দ্রুত বিতরণ করা হবে।



