জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই নোয়াখালীতে বিএনপি নেতাদের বাণিজ্যমেলা
নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৬ এএম
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ‘দ্য নোয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ নাম ব্যবহার করে হাসপাতালসংলগ্ন আবাসিক এলাকায় মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্যমেলার আয়োজন করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, অভিভাবক ও বাসিন্দারা।
জানা গেছে, নোয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালসহ শতাধিক বেসরকারি হাসপাতালঘেরা মাইজদীর হাউজিং এস্টেটের বালুর মাঠে গত ১৬ অক্টোবর থেকে মেলার দোকান নির্মাণ শুরু হয়। নেতৃত্ব দিচ্ছেন নোয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফিরোজ আলম মতিন। তার নেতৃত্বে শতাধিক দোকান তৈরি করে মেলা চালু করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শহরের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, হাসপাতালসংলগ্ন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বারবার এ ধরনের মেলা আয়োজনের ফলে নোয়াখালী শহর ক্রমে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
হাউজিং এলাকার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, কিছুদিন পরপর এমন মেলা এই এলাকাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। এমনিতেই এলাকায় সন্ত্রাসীদের উৎপাত, তার ওপর মেলাকে ঘিরে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়ে যায়। নারী ও শিশুরা ঘর থেকে বের হতেও ভয় পায়।
একটি বেসরকারি হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মালিক বলেন, আগে আওয়ামী লীগ এমন মেলা করত, এখন বিএনপি করছে। দুই দলই নিজেদের আয় বাড়াতে জনগণের ভোগান্তির কথা ভুলে গেছে। হাসপাতাল এলাকায় এমন মেলা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
শহরের ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ বলেন, নোয়াখালী এক গলির শহর। সারা বছর জলাবদ্ধতায় ভোগে মানুষ। এখন শুকনো মৌসুমে ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পোষাতে দোকান সাজাচ্ছে। অথচ এ সময়ে প্রভাবশালীরা বাইরের ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে মেলার আয়োজন করেছে—এটা অন্যায়।
নোয়াখালী সুপার মার্কেট পরিচালনা কমিটির সভাপতি একরামুল হক বলেন, এখন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লোকসান পুষিয়ে উঠতে ব্যস্ত। এমন সময় অস্থায়ী মেলা খুললে তাদের ক্ষতি হবেই।
অভিযোগের বিষয়ে মেলার আয়োজক ফিরোজ আলম মতিন বলেন, স্থানীয় বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের সমন্বয়ে এ মেলা আয়োজন করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও হাউজিং সোসাইটির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের অনুমতি এখনো পাইনি। তারা বন্ধ রাখতে বলেছে—এটি আমাদের ভুল হয়েছে। প্রশাসন অনুমতি না দিলে মেলা বন্ধ করা হবে।
অন্যদিকে জেলা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা দাবি করেছেন, তারা এ মেলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. সাবের আহমেদ, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান এবং ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান মোহাম্মদ নোমান বলেন, গতবার মেলা আয়োজন করে আমাদের বদনাম হয়েছিল। এবার আমরা সরাসরি সম্পৃক্ত নই, যদিও চেম্বারের সদস্য হিসেবে নাম আসছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, জেলায় এখনো কোনো মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবু মেলা আয়োজনের খবর পেয়েছি। ইতোমধ্যে তা বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ অমান্য করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



