নাত জামাইয়ের প্রতারণায় নিঃস্ব দাদি
সাব্বির হোসেন, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৪৬ পিএম
ছবি-যুগের চিন্তা
একটি ঘরের কোণে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন এক বৃদ্ধা নারী। কাছে যেতেই উঠে দাঁড়ালেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন। পরিবেশ ভারি হয়ে উঠল তার আর্তনাদে। মনে হলো যেন আচমকা মাটি থেকে আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠছে এক মায়ের আর্তনাদে। নাত জামাইয়ের প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে এভাবেই ভেঙে পড়েছেন অযুফা বেগম নামের এই নারী।
ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের উত্তর রৌহা গ্রামের বাসিন্দা অযুফা বেগমের সঙ্গে। অযুফা বেগমের বড় ছেলে জসিমের মেয়ে সাদিয়ার সাথে বিয়ে হয় তাড়াইল উপজেলার সাচাইল-তাড়াইল ইউনিয়নের ভূঁইয়া বাড়ির হান্নান ভূঁইয়ার ছেলে পারভেজের।
জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে পরিবারের অজান্তে নাতিকে ঢাকায় মায়ের সাথে দেখা করার কথা বলে মায়ের পছন্দের ছেলে পারভেজের সাথে বিয়ে দেন। পরবর্তীতে পারভেজের পরিবার জানায় তাদের থাকার মতো ঘর নেই নতুন বাড়ি করা লাগবে যার দায়িত্ব নেন মেয়ের বাবা জসিম। বাড়ির কাজ শুরুর পরে ছেলেপক্ষের তালবাহানা দেখে কাজ ও মালামাল সরবরাহ বন্ধ করে দেয় জসিম৷ এরপর নাতজামাই পারভেজ সাদিয়াকে নিয়ে দাদির কাছে এসে বাড়ির কাজ শেষ করার আবদার করেন। অসহায় দাদি বড় নাতি জামাইয়ের আবদার পূরণ করতে রড-সিমেন্ট বিক্রেতার কাছে ব্যাংকের চেক জমা দিয়ে বাড়ি তৈরির মালামাল পাঠান। ওই দোকান থেকে ৬ লাখ টাকার অধিক মালামাল কেনা হলেও জমা হয়েছে ৪লাখ টাকা। বাকি টাকার জন্য অযুফাকে দোকানদার বারবার তাগিদ দেয়ার পরেও যখন দিতে ব্যর্থ তখন ঘটনার জানাজানি হয়। টাকায় জন্য নাতির শশুরবাড়ি গেলে অযুফাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। এদিকে টাকা না দেয়ার ব্যর্থতায় রড-সিমেন্ট বিক্রেতা চেকের মামলার প্রস্তুতি নেন। এ অবস্থায় জীবনের শেষ সময়ে দুচোখে অন্ধকার দেখছেন বৃদ্ধা নারী।
এই বিষয়ে সরেজমিনে নাত জামাই পারভেজের নবনির্মিত বাড়িতে সংবাদকর্মীরা গেলে তাকে পাওয়া না গেলেও তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে উল্টো জসিমের নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন। এসময় পারভেজের ছোট ভাই পাভেল সংবাদকর্মীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
মেয়ের বাবা জসিম বলেন, 'আমার মেয়েকে বিয়ের পর ছেলের নানির বাড়িতে নিয়ে তোলে। তখন ছেলের মা আমার কাছে বলে, আমরা ভাড়া বাসায় থাকি। সেখানে নতুন বউকে কীভাবে তুলি। তারা আমাকে বলে একটি ঘর তৈরি করে দিতে। সেই সঙ্গে আমার মায়ের কথায় আমি রাজি হই। ওনারা আমার কাছে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা দেয় মালামালের জন্য। কিন্তু মালামাল পাঠানোর পর তাদের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করি। তাদের তালবাহানা শুরু হলে আমি মাল পাঠানো বন্ধ করে দেই। আমি মালামাল বন্ধ করে দেওয়ার পর তারা আমার মাকে বুঝিয়ে তার চেক জমা রেখে দোকান থেকে মালামাল নেয় সর্বমোট ১২ লাখ ২৫ হাজার টাকার। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় আমার মা তাদের বাড়িতে টাকার জন্য গেলে আমার মা'কে অপমান করে বের করে দেয়। এখন আমাদের মরা ছাড়া কোন রাস্তা নাই।'
মেয়ের দাদি অযুফা বেগম কান্না জর্জরিত কন্ঠে বলেন, 'আমারে রাজি করাইয়া নাতিন জামাই এবং তার মা সকল মালামাল নিয়ে ঘর করছে। কিন্তু এখন তারা টাকা দিচ্ছে না। টাকা চাইতে গেলে অপমান করে। টাকা দিতে না পারলে দোকানদারও মামলা করবে। এখন আমি কোনো উপায় পাচ্ছি না।'
জসিমের মামা বলেন, 'বিল্ডিং করার প্রথমে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে প্রায় ৬ লাখ টাকার মালামাল নেওয়ার পর যখন টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়, তখন তারাও মালামাল পাঠানো বন্ধ করে দেয়। এরপর তার বোনকে বুঝিয়ে চেক জমা দিয়ে মালামাল নিয়েছে। এখন টাকা চাইতে গেলে আমাদের উল্টো অপদস্থ করে। তারা এখন সব অস্বীকার করে।
রড সিমেন্টের দোকানদার বলেন, 'জসিম মালামাল দেওয়া বন্ধ করার পর জসিমের মা এসে চেক জমা রেখে মালামাল নিয়েছে। সব মালামাল জসিমের মেয়ের শশুর বাড়িতে গেছে। সবকিছুর প্রমান আছে।
অভিযোগের বিষয়ে নাতি জামাই পারভেজের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব মুর্শেদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, 'এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।'



