চট্টগ্রামের অধিকাংশ শিল্পকারখানা অগ্নিঝুঁকিতে
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫০ এএম
চট্টগ্রামের অধিকাংশ শিল্পকারখানা অগ্নিকাণ্ডের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ, বহু কারখানাই এখনো কমপ্লায়েন্স ভবনে রূপান্তর হয়নি এবং বেশিরভাগেরই ফায়ার সেফটি সনদ নেই। সম্প্রতি চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পরিস্থিতি নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বিভাগ জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবারের সিইপিজেড অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একের পর এক শিল্পকারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। এমনকি নিয়ন্ত্রিত ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলগুলোতেও এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের মতে, অনেক কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই বা অচল অবস্থায় রয়েছে, জরুরি বহির্গমন পথ অবরুদ্ধ, এবং শ্রমিকদের অগ্নিকাণ্ডকালীন করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেই।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর জানিয়েছে, চট্টগ্রামে অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৯৪টি, যার সবই পোশাক কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মাহবুবুল হাসান বলেন, চট্টগ্রামের অধিকাংশ পোশাক কারখানায় অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল। কিছু প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থা থাকলেও তা আরও জোরদার করা জরুরি।
চট্টগ্রামে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার শিল্পকারখানা রয়েছে। এর মধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে নিবন্ধিত কারখানা ৬ হাজার ৫৯৭টি। সীতাকুণ্ড, কালুরঘাট, কেইপিজেড, কোরিয়ান ইপিজেড, বিসিক শিল্পাঞ্চল ও সিইপিজেডে আরও কয়েক হাজার কারখানা রয়েছে।
গত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। প্রায় ১৭ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। যদিও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে ভবনের অভ্যন্তরে থাকা কেমিক্যাল ও অপর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা আগুন নেভাতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
এ ছাড়াও গত ১১ জুলাই কর্ণফুলী ইপিজেডের অ্যারো ফেভারিট তুলা কারখানায় আগুন লাগে। তারও আগে, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর ইপিজেডের এক ভবনের চতুর্থ তলায় আগুনে ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে।
নগরবিদ ও স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, চট্টগ্রাম দেশের প্রধান শিল্পাঞ্চল, কিন্তু এখানকার অধিকাংশ কারখানা অগ্নিনিরাপত্তার মৌলিক শর্ত পূরণ করে না। জরুরি বহির্গমন পথ বন্ধ, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র অচল, ভেন্টিলেশন দুর্বল, বৈদ্যুতিক লোড বেশি—সব মিলিয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা ভয়াবহ। এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি অনিবার্য।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, সব ইপিজেড ভবনকে দ্রুত কমপ্লায়েন্স ভবনে রূপান্তর করতে হবে। শ্রমিকদের ফায়ার ড্রিল প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা জরুরি। শীতকাল আসছে, এ সময় অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি আরও বাড়ে—তাই সবাইকে এখনই সতর্ক হতে হবে।



