Logo
Logo
×

সারাদেশ

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বরিশালের নদীতে মা-ইলিশ ধরার মহাউৎসব

Icon

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০১ পিএম

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বরিশালের নদীতে মা-ইলিশ ধরার মহাউৎসব

মা-ইলিশ রক্ষায় চলমান সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বরিশালের নদ-নদীতে অবাধে ইলিশ শিকার ও বিক্রি চলছে। ৩ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা, বিক্রি, পরিবহন ও সংরক্ষণে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও বাস্তবে মেঘনা নদীর ২২ কিলোমিটারসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘ইলিশ শিকারের উৎসব’ চলছে। নদীর পাড়ে বসছে অস্থায়ী বাজার, সেখানে প্রকাশ্যেই চলছে নিষিদ্ধ ইলিশের কেনাবেচা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হিজলা ও বানারীপাড়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তারা প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে সমঝোতা করে অভিযান পরিচালনা এড়িয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, হিজলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম ও বানারীপাড়ার মৎস্য কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন রজনী নির্দিষ্ট এলাকাকে অভিযানের বাইরে রাখার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। এর ফলে মেঘনা নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার ও সন্ধ্যা নদীর কিছু অংশে কোনো অভিযান নেই।

মৎস্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগের তিন জেলা ও ছয় উপজেলায় মোট ৪৩২ কিলোমিটার নদী এলাকায় ইলিশ আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, তবে মাঠপর্যায়ে অভিযান অনেকটাই ঢিলেঢালা।

গত সাত দিনে বরিশালের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতে গিয়ে পাঁচটি দল জেলেদের আক্রমণের শিকার হয়েছে। জনবল ঘাটতি থাকায় রাতের বেলায় অভিযান কার্যত বন্ধ, ফলে হাজারো জেলে ট্রলার ও নৌকা নিয়ে দিন-রাত ইলিশ শিকার অব্যাহত রেখেছেন।

হিজলার স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের নেতৃত্বে একটি ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে উঠেছে, যারা নির্দিষ্ট সময় ও এলাকায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য অভিযান পরিচালনা করে। ফলে মেঘনা নদীর হিজলা অংশে মা-ইলিশ নিধন চলছে অব্যাহতভাবে।

এদিকে উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্তত অর্ধশত মাছঘাটে জেলেরা মালিকদের চাপে নিষিদ্ধ সময়েও শিকারে নামছেন। গত বছর যেখানে ১০–১৫টি স্পিডবোটে অভিযান হতো, এবার মাত্র দুটি স্পিডবোটে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, ফলে নদীর বড় অংশ অভিযানের বাইরে রয়ে গেছে।

বানারীপাড়ায়ও একই অবস্থা। সাত দিন পার হলেও সন্ধ্যা নদীতে উপজেলা মৎস্য বিভাগের দৃশ্যমান কোনো অভিযান দেখা যায়নি। দিন-রাত সমানতালে চলছে ইলিশ শিকার ও বিক্রি।

মেহেন্দীগঞ্জ, বাবুগঞ্জ, উজিরপুর ও বাকেরগঞ্জের নদীগুলোতেও আংশিক বা প্রতীকী অভিযান চলছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।

অভিযোগ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তা কোনো মন্তব্য না করে ফোন কেটে দেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ কান্তি ঘোষ বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। তবে শুরুতেই জেলেদের হামলার ঘটনা ঘটেছে, তাই সতর্কভাবে অভিযান চালাতে হচ্ছে। জনবল সংকট সত্ত্বেও প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ একযোগে ইলিশ রক্ষায় কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, মেঘনা নদীর ২২ কিলোমিটারসহ বিশাল জলাধার নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন। আমরা যেদিকে যাই, জেলেরা অন্যদিকে চলে যায়। দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে; প্রমাণ মিললে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৯ অক্টোবর পর্যন্ত বরিশালে ৭৫০টি অভিযান, ২৫১টি মামলা, ১৬৯ জনের কারাদণ্ড, এবং ৫ লাখ ১৪ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে। এছাড়া ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯০০ মিটার জাল জব্দ ও ধ্বংস করা হয়েছে এবং জব্দকৃত সরঞ্জাম নিলামে বিক্রি করে ৩ লাখ ১১ হাজার ৮০০ টাকা আদায় করা হয়েছে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন