কুড়িগ্রামে পানি নামায় ভেসে উঠছে ফসলের ক্ষতচিহ্ন
রাজু মোস্তাফিজ,কুড়িগ্রাম
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫৮ পিএম
ছবি-যুগের চিন্তা
কুড়িগ্রামে অবিরাম বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলের কারণে তিস্তা,ধরলা,দুধকুমোর ও ব্রক্ষঅপুত্রসহ ১৬টি নদ-নদীগুলোতে গত ৪ অক্টোবর থেকে হঠাৎ করে পানি বাড়তে শুরু করে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছায়।
টানা দুই দিন পানি বৃদ্ধির পর ৬ অক্টোবর থেকে পানি নামতে শুরু করে। বর্তমানে পানি পুরোপুরি নেমে গেলেও, সেই পানির ক্ষতচিহ্ন রয়ে গেছে নদ-নদী অববাহিকার নিম্ন অঞ্চল গুলির বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী,উজানের ঢল ও বৃষ্টির কারণে আকস্মিক পানি বৃদ্ধির ফলে কুড়িগ্রামের প্রায় ১ হাজার ৭শ৮৭ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোপা আমন ধান, সবজি এবং অন্যান্য মৌসুমি ফসল। অনেক ক্ষেতেই পানিতে ডুবে পচে গেছে ধানগাছ, জমে থাকা পলির কারণে শুকিয়ে গেছে সবজি ক্ষেত। বৃহষ্পতিবার সরেজমিনে নাগেশ্বরী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দামালগ্রাম, চর নুচনি, ফান্দেরচর, নতুন সুইচগেট, কমলারকুটি ও বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সিটমালিয়ানি এলাকায় জমি থেকে পানি নামলেও ফসলের ওপর পুরু পলির স্তর জমে আছে।
পলির নিচে চাপা পড়ে ধানগাছগুলো নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেতেই ধানগাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। চর নুচনির কৃষক জাহিদুল ইসলাম জানান,অসময়ে পানি আসার কারণে আমার চার বিঘা ধানের ক্ষেত একদম নষ্ট হয়ে গেছে। গাছগুলো পচে গেছে এখন আর ধান হওয়ার কোনো আশা নেই। ধাউরারকুটির কৃষক রজ্জাক আলী ও আবুল কালাম বলেন, জলবায়ুর পরির্র্বতনের কারণে চরের অনেক ধান ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু পানি না, সাথে কাঠের গুড়িও এসে ধানগাছ ভেঙে দিয়েছে। পুরো ফসলটাই নষ্ট।
কমলারকুটির কৃষক হাফিজুর মিয়া বলেন, আমার ছয় বিঘার মধ্যে চার বিঘা জমিতেই পলি জমে গেছে, সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি দুই বিঘা একটু ভালো আছে, কিন্তু ফলন ভালো হবে না। আমি ঋণ করে চাষ করেছিলাম এখন কী দিয়ে ঋণ শোধ করব ? নাগেশ্বরীর দামালগ্রাম এলাকায় দুধকুমার নদীর পাড়ে একসঙ্গে প্রায় দুই শত বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, গত তিন দিনে নদীর তীব্র ভাঙনে কয়েক বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে কুড়িগ্রাম সদর, রাজিবপুর, রৌমারী, ফুলবাড়ী, উলিপুর, রাজারহাট, ভুরুঙ্গামারী ও চিলমারী উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলেও।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, আমাদের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ১ হাজার ৭শ৮৭ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে ছিল। এখন পানি নেমে গেছে। মাঠপর্যায়ে তদন্ত চলছে চূড়ান্তভাবে কতটুকু ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা শিগগিরই জানানো যাবে।
তিনি কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন,পানি নেমে যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে পলির আস্তরণে ফসল ঢেকে গেছে। এই অবস্থায় গাছের পচন রোধে আগে পানি স্প্রে করে পলি ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর সার প্রয়োগ করলে কিছুটা ফলন উদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে।



