Logo
Logo
×

সারাদেশ

কুড়িগ্রামে নদে ভেসে আসছে লালচে কাঠ, চন্দন নয়, পচা কাঠ বলছে বন বিভাগ

Icon

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৩ এএম

কুড়িগ্রামে নদে ভেসে আসছে লালচে কাঠ, চন্দন নয়, পচা কাঠ বলছে বন বিভাগ

উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বর্ষণে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি কয়েক দিন ধরে বাড়ছিল। এই বন্যার পানিতে ভারত থেকে ভেসে এসেছে অসংখ্য গাছের গুঁড়ি—যার বেশিরভাগই বাকল ও শিকড়বিহীন, আর রঙে লালচে। দেখতে চন্দন কাঠের মতো হওয়ায় অনেকেই এগুলোকে রক্তচন্দন বা লাল চন্দন কাঠ ভেবে বিক্রি করছেন।

রোববার (৫ অক্টোবর) ভোর থেকেই আসাম সীমান্তঘেঁষা কালজানি নদী হয়ে দুধকুমার ও চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদে এসব কাঠ ভেসে আসতে শুরু করে। এরপর থেকেই নদীর দুই তীরে কাঠ ধরার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কেউ নৌকা, কেউ বাঁশের ভেলা, আবার কেউ সাঁতরে কাঠগুলো ধরতে নদীতে নামে। পরে তীরে তুলে অনেকে বিক্রিও শুরু করেন।

স্থানীয়ভাবে এসব গাছের গুঁড়ির দাম পড়ছে ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত, কোথাও কোথাও আরও বেশি। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নে একটি বড় লালচে কাঠের গুঁড়ির দাম ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যদিও মালিকপক্ষ জানায়, ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে রাজি।

রায়গঞ্জের দামাল গ্রামের আব্দুল মোতালেব (৬০) বলেন, চারজন মিলে প্রায় ৫০ ফুট লম্বা একটি লাল কাঠ তুলেছি। দেখতে একদম চন্দনের মতো। দাম চেয়েছি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তবে ১ লাখ ২০ হাজারে দিয়ে দেব।

অন্যদিকে অনেকে এই কাঠ জ্বালানি হিসেবেও কিনছেন। কালজানি নদীর পাড়ের বাসিন্দা আজাদ হোসেন (৫৫) বলেন, আমার খড়ির গোলা আছে। একেকটা কাঠ ১২ হাজার টাকায় কিনেছি, কেটে বিক্রি করব জ্বালানি কাঠ হিসেবে।

ছিটমাইলানী গ্রামের সবুজ মিয়া (৬২) জানান, রোববার রাত থেকে পরিবার নিয়ে প্রায় ৫০০ মণ কাঠ তুলেছি। কিছু রাখব রান্নার কাজে, বাকিটা বিক্রি করব।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাঠগুলো দেখেছি। এগুলো দীর্ঘদিন পানিতে থাকার কারণে রঙ পরিবর্তিত হয়ে লালচে হয়েছে। প্রকৃত চন্দন কাঠ নয়। কাঠগুলো পচে গেছে, এবং কোনো নমুনাতেই শ্বেত বা রক্তচন্দনের বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, ভারতে বনাঞ্চল পরিষ্কার করতে নদীতে ফেলা কাঠগুলো স্রোতের টানে কুড়িগ্রামে এসে পৌঁছেছে। মানুষ ভুল করে এগুলো চন্দন ভেবে কিনছে।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিদ মির্জা নাসির উদ্দিন জানান, প্রায় সব কাঠেই ট্যানিন ও ফেনলিক যৌগ থাকে। দীর্ঘদিন পানিতে ভেজা থাকলে এই যৌগগুলো অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জারণের মাধ্যমে লালচে বা বাদামি রঙ তৈরি করে। তাই সাধারণ কাঠও দেখতে চন্দনের মতো হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলোর সঙ্গে চন্দনের কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি আরও বলেন, চন্দন কাঠের একটি বিশেষ গন্ধ ও তেলীয় উপাদান থাকে, যা শুকনো কাঠ ঘষলে টের পাওয়া যায়। কিন্তু এই কাঠগুলোতে সে গন্ধ বা উপাদান নেই—যা প্রমাণ করে, এগুলো সাধারণ গাছের পচা কাঠ মাত্র।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন