অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের উৎস খুঁজতে রংপুর-গাইবান্ধায় অনুসন্ধান দল
রংপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪০ এএম
রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের উৎস ও বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উচ্চপর্যায়ের তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল মাঠে নেমেছে। অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. বয়জার রহমানের নেতৃত্বে গঠিত এই দলে রয়েছেন এপিডেমিওলজি সেলের ডা. ফয়সাল তালুকদার এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ডা. তায়ফুর রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার প্রতিনিধি দলটি রংপুরের কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার কয়েকটি এলাকায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত খামারি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন এবং আক্রান্ত স্থানগুলো পরিদর্শন করেন।
এদিকে পীরগাছা, কাউনিয়া ও মিঠাপুকুরের পর এবার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলাতেও অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গযুক্ত দুই রোগী শনাক্ত হয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, মর্ণেয়া ইউনিয়নের মৌভাষা গ্রামের ওই দুই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাসার বলেন, মৌভাষা এলাকা কাউনিয়ার হারাগাছ সংলগ্ন। যেহেতু হারাগাছে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে, তাই এই দুই রোগীকেও সন্দেহভাজন হিসেবে নমুনা পাঠানো হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিধি দলটি সোমবার (৬ অক্টোবর) রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকায় সরেজমিন তদন্ত করে। সেখানে খামারি আমিনুল ইসলামের তিনটি গরু মারা যাওয়ার পর সেগুলো পুঁতে ফেলা হয়। মৃত গরুগুলো যে গাছের পাতা খেয়েছিল, তারও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দলটি কাউনিয়ার ঠাকুরদাস, পীরগাছার আনন্দী ধনীরাম ও মাইটাইল গ্রাম পরিদর্শন করে। এসব এলাকায় দুই নারী-পুরুষ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং একাধিক গবাদিপশু মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিনিধি দলের প্রধান ডা. বয়জার রহমান জানান, গবাদিপশুর সংগৃহীত ১১টি মাংসের নমুনার মধ্যে ১০টিতেই অ্যানথ্রাক্স পজিটিভ পাওয়া গেছে। আরও কিছু নমুনা পরীক্ষাধীন রয়েছে। “আমরা ঘাস ও মাটির নমুনাও সংগ্রহ করেছি। সেগুলোর পরীক্ষার ফল হাতে এলে সংক্রমণের মূল উৎস শনাক্ত করা সম্ভব হবে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও সুপারিশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানান, আক্রান্ত এলাকায় ‘রিং মডেল’ অনুসারে গবাদিপশুর টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে, যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। তাঁরা বলেন, সিরাজগঞ্জের পর এবার এত বিস্তৃত এলাকায় অ্যানথ্রাক্সের বিস্তার উদ্বেগজনক। আক্রান্ত সব এলাকার গবাদিপশুকে টিকাদান নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।



