ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
সোনাগাজীতে কর্মহীন দুই হাজার জেলে, সহায়তা পাবেন মাত্র ২৭৫ জন
ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৩ এএম
মা ইলিশের প্রজনন নিশ্চিত করতে ৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে ২২ দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, যা চলবে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এ সময় ফেনীর সোনাগাজী উপকূলে মাছ ধরা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দুই হাজারেরও বেশি জেলে। তবে তাদের মধ্যে মাত্র ২৭৫ জন নিবন্ধিত ইলিশ জেলে সরকারি প্রণোদনার আওতায় সহায়তা পাবেন, বাকিরা থাকছেন সুবিধাবঞ্চিত।
সোনাগাজী উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি, এর মধ্যে এক হাজার উপকূলীয় জেলে। কিন্তু প্রণোদনা হিসেবে ৬ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র কার্ডধারী ২৭৫ জন ইলিশ জেলের জন্য। ফলে নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে সব জেলে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বেশিরভাগই সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সোনাগাজী সদর ও চরচান্দিয়া ইউনিয়নের জলদাসপাড়ার জেলে পল্লীতে নৌকা ও জাল পড়ে আছে অব্যবহৃত অবস্থায়। নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে বাঁধা নৌকাগুলোই এখন তাদের জীবিকার থেমে যাওয়া চিহ্ন।
স্থানীয় জেলেরা জানান, বছরে তিন দফায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। এ সময় বিকল্প আয়ের কোনো সুযোগ না থাকায় তারা চরম সংকটে পড়েন। একদিকে মাছ ধরা বন্ধ, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিতে কষ্টে দিন কাটছে। অনেকেই মহাজনের ঋণ ও এনজিওর কিস্তি শোধে হিমশিম খাচ্ছেন।
জেলে সুমন জলদাস বলেন, পুরো পরিবার নদী নির্ভর। এখন ২২ দিন আয়ের পথ পুরোপুরি বন্ধ। নিবন্ধিত জেলে হয়েও প্রণোদনা পাই না, কারণ তালিকায় শুধু ইলিশ জেলেরাই থাকে।
আরেক জেলে জয়দেব বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর শীত মৌসুমে মাছ পাওয়া যায় না। তখন সংসার চালাতে কষ্ট হয়। ইলিশ মৌসুম শেষ হয়ে গেল এই নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়েই।
জেলে কৃষ্ণধন বলেন, সরকারি চালের সহায়তা নিষেধাজ্ঞা চলাকালেই শেষ হয়ে যাবে। পরে আবার ঋণ করে সংসার চালাতে হবে। বিকল্প কাজের সুযোগ পেলে জেলেরা কিছুটা স্বস্তি পেত।
সোনাগাজী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাছলিমা আকতার বলেন, নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে সচেতনতা তৈরিতে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করা হয়েছে। নিয়মিত টহল জোরদার থাকবে। সরকার কেবল নিবন্ধিত ইলিশ জেলেদের সহায়তা দেয়, তবে নিষেধাজ্ঞা মানা সবার জন্য বাধ্যতামূলক।



