সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ, বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও নির্যাতনের অভিযোগ
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫৩ পিএম
ছবি : যুগেরচিন্তা
কিশোরগঞ্জে সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়াকে কেন্দ্র করে জমি দখল ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে পৌর বিএনপির ১নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় শনিবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে ভুক্তভোগী নূর মোহাম্মদ আতাউল হক তানভীর বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতে শহরের গাইটাল ফার্মের মোড়ে সাবেক জেলা বিএনপির সদস্য নূর মোহাম্মদ আতাউল হক তানভীরের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পারিবারিক প্রয়োজনে তানভীর রুবেলের নানুর কাছ থেকে সুদের ওপর পাঁচ লাখ টাকা ধার নেন। গত নয় মাস ধরে নিয়মিত ৪০ হাজার টাকা সুদ পরিশোধ করলেও সম্প্রতি তা পরিশোধে ব্যর্থ হন তিনি। এর জের ধরে শুক্রবার রাতে রুবেল হোসেন তার দলবল নিয়ে তানভীরের বাড়ির দেয়াল ভেঙে জমি দখলের চেষ্টা করেন। তবে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দখল প্রক্রিয়া থেমে যায়।
ভুক্তভোগী নূর মোহাম্মদ আতাউল হক তানভীর বলেন, রুবেল দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পারিবারিক জমি দখলের ষড়যন্ত্র করে আসছে। সে বারবার উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে আমাদের হয়রানি করছে।
তিনি আরও বলেন, গত মাসে এক সালিশ বৈঠকের সময় রুবেল প্রকাশ্যে তাকে জীবননাশের হুমকি দেন। এর আগেও কয়েক দফায় তার বাড়ির সামনে এসে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন বলে অভিযোগকারীর দাবি। যেকোনো মুহূর্তে রুবেল ও তার অনুসারীরা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালাতে পারে। জমি দখলের জন্য ইতোমধ্যেই কয়েক দফা চুক্তির ফাঁদ পেতেছে তারা। এতে আমাদের পরিবার চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।”
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলতে অনেকে ভীত। তবে তার বিরুদ্ধে ‘চাপ সৃষ্টি করে জমি দখল ও সুদের টাকা আদায়ের চেষ্টা’ নিয়ে এলাকাজুড়ে নানা আলোচনা চলছে। ফার্মের মোড় ও আশপাশের এলাকায় সুদের টাকার লেনদেন একটি অপ্রকাশিত মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক সংকটে পড়া অনেক মানুষ সহজে টাকা পেতে সুদের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছেন। পরে সুদ শোধ করতে না পেরে জমি-বাড়ি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকে।
পৌর বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম আশফাক বলেন, আমি ক্লিয়ার বলছি শুধু রুবেল না এর চেয়ে বড়ও যদি কেউ হয় আমি কোনো দিন এটা মেনে নিবো না, এ ধরনের অপকর্ম করে বেড়াবে আর দল দায়দায়িত্ব নিবে। আমি তাৎক্ষণিক আমার সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সাহেবের সাথে কথা বলেছি তিনি আমাকে সিরিয়াসলি জানিয়েছেন এই ধরনের দখলদারি বদ্রাস করা হবে না। আমিও উনার সাথে একমত, বিষয়টা আমি কিশোরগঞ্জ সদর থানার ওসি সাহেব কে বলেছি এই দায়দায়িত্ব আমার না, যে অন্যায় করবে তার প্রতিফলন সে পাবে, আমি কোনো ভাবেই এটার পক্ষে না।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি রুবেলের নানুর কাছ থেকে জেনেছি। তিনি জানিয়েছেন, তানভীর তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে এখন ফেরত দেয়নি। পরে রুবেল আমার কাছে আসছিলো আমি তাদেরকে বলেছি, সন্ধ্যায় বসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেব। তবে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, বিএনপির নাম ব্যবহার করে কেউ কোনো ধরনের জায়গা দখল করতে পারবে না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রুবেল হোসেনের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তানভীর ভাই আমার এলাকার বড় ভাই। তিনি আমার নানুর কাছ থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকা নিয়েছেন। আমি কোনো জায়গা জবর দখল করিনি। বরং তিনিই আমাকে বলেছেন, ওই জায়গার বাউন্ডারি ভেঙে দোকান ঘর নির্মাণ করতে। শর্ত ছিল যখন তিনি আমাকে টাকা ফেরত দিতে পারবেন, তখন আমি জায়গাটি ছেড়ে দেব। সেই অনুযায়ী আমি দোকানের কাজ করছি। বিষয়টি এলাকার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তানভীর ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুনের ফোনে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোনে সাড়া দেননি।



