কক্সবাজার সমুদ্রে ৩ শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫২ পিএম
ছবি-যুগের চিন্তা
বৈরী আবহাওয়া, সাগরের নিম্নচাপ ও বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে লাখো দর্শনার্থীর উপস্থিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জনের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেনা, পুলিশ বিজিবি, র্যাব ও আনসারের সমন্বয়ে গঠিত কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে শহরের সমুদ্র সৈকতের তিনটি পয়েন্টে তিন শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ পাঁচটায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টের উম্মুক্ত মঞ্চে তৈরি ঘোষণা মঞ্চ থেকে সরস্বতী বাড়ি মন্দির এর প্রধান পুরোহিত খোকন ভট্টাচার্য মন্ত্র উচ্চারণের পরপরই প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। এরপর একে একে তিন শতাধিক প্রতিমা গুলো বিসর্জন দেয়া হয় ।

এর আগে বিজয়ী দশমীর দিনের শুরুতে মন্ডপে মন্ডপে করুন সুর বেজে ওঠে। দুপুরের পর থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী, কলাতলী সুগন্ধা পয়েন্টে পর্যটকরা জমায়েত হতে শুরু করে। দুপুরের পর থেকে সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে প্রতিমা বহনকারী গাড়িগুলো আসতে থাকে। বিকেল চারটার পর থেকে পুরু সৈকত লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু জানান কক্সবাজার সৈকতের লাবনী পয়েন্টে ৩ শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রেজওয়ানের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, টানা ছুটি ও প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল আগে থেকে। পুলিশ ্যাব এর পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যেরাও দায়িত্ব পালন করেছেন।
সমুদ্র সৈকত ছাড়াও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয় বলেও জানান তিনি। একই সাথে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশ একসাথে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ সাইফ উদ্দিন শাহীন জানিয়েছেন, কক্সবাজারে দেশের সর্ববৃহৎ বিসর্জন টি যাতে সত্যিকল ভাবে সম্পন্ন করা যায় , সে লক্ষ্যে জেলা পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল পূর্ব থেকে। সবগুলো প্রতিমাকে মন্দির থেকে নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সৈকতে নিয়ে আসা হয়। এ কাজে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ও সহযোগিতা করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
কক্সবাজারের নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান জানান, বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বিসর্জন টি সম্পন্ন করার পাশাপাশি আগত পর্যটকরা যাতে কোন প্রকার হয়রানি শিকার না হয় সেজন্য কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসনের তিনটি টিম।
দেশের সর্ববৃহৎ বিসর্জন অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল, কক্সবাজার ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মো.মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আরা সপ্না, র্যাব ১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ, কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমির আব্দুল্লাহ আল ফারুক ও কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল প্রমুখ।
এদিকে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে ঢাকা থেকে আগত লাবনী রায় বলেন,কক্সবাজার সৈকতে এই প্রথমবারের মতো বিসর্জন দেখতে আসলাম। অফিসের কাজে এসেছি কক্সবাজারে এই সুযোগে বড় বিসর্জন টি দেখার সুযোগ পেলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বিসর্জন।
রংপুর থেকে আসা পর্যটক আরশাদ আহমেদ বলেন, পূজার ছুটিতে কক্সবাজার এসেছি। আমরা সবাই পরিবার নিয়ে দারুন মজা করছি। খুলনা থেকে আসা পর্যটক নন্দনী রায় বলেন, পরিবার নিয়ে পূজার ছুটিতে এসেছি কক্সবাজারে। এখানে পূজা ও করলাম সবচেয়ে বৃহৎ বিসর্জন দেখলাম।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কয়েকদিন আগে থেকেই আমাদের সব হোটেলের রুম বুকিং হয়ে গেছে। আগামী চার তারিখ পর্যন্ত কোথাও রুম খালি নেই। টানা ছুটির কারণে বিপুল পর্যটক এসেছে। তবে আমরা হোটেল মালিকদের বলেছি যেন কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করে।
হোটেল কক্স টুডের জিএম আবু তালেব বলেন, আগামী ৮ তারিখ পর্যন্ত কোন রুম খালি নেই। অনেক গেস্ট কে আমরা জায়গা দিতে পারেনি।



