পরকীয়ার দোহাই দিয়ে প্রবাসীর স্ত্রী ও যুবককে নির্যাতন
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৬ পিএম
ছবি-যুগের চিন্তা
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে পরকীয়ার অভিযোগ তুলে প্রবাসীর স্ত্রী ও যুবককে বিদ্যুতের পিলারে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পৌর সদরের দড়ি-চারিয়া কোণা এলাকায় বিদ্যুতের পিলারের সাথে বেঁধে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে সুইটি বেগম (২৮) ও ওয়াহিদ মিয়া (২৯) কে পেটাচ্ছেন একই এলাকার হাবিবুর রহমান (হাবি ডাকাত)। এসময় চারপাশে ভীড় করে দেখছেন এলাকার নারী পুরুষ। হাবিবুর রহমান প্রথমে একটি কঞ্চি দিয়ে দুজনকেই পেটানোর পর পাশ থেকে আরেকজন আরো তিনটি কঞ্চি এগিয়ে দেন। সেগুলো একসাথে করে পেটাতে থাকেন হাবিবুর। এসময় সুইটি ও ওয়াহিদকে চিৎকার করতে শোনা যায়। এর মধ্যে কেউ কেউ মারতে নিষেধ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কটিয়াদি পৌর সদরের দড়ি-চারিয়া কোণা এলাকার প্রবাসী রতন মিয়ার সাথে প্রায় এক যুগ আগে বিবাহ হয় একই এলাকার সুইটি বেগমের। বিয়ের ৪ বছর পর রতন মিয়া পরিবারের স্বচ্ছতা ফেরাতে সৌদি আরবে চলে যায়। এর কয়েক বছর পর একই উপজেলার চান্দপুর ইউনিয়নের চারিয়া গ্রামের ওয়াহিদ মিয়ার সাথে সুইটি আক্তারের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে সুইটি বেগম ও ওয়াহিদ মিয়াকে স্থানীয়রা সুইটির স্বামীর বাড়ি থেকে তাদের আটক করে। রবিবার সকালে বাড়ির সামনে বিদ্যুতের খুটির সাথে দুই হাতে বেঁধে বেত্রাগাত করে হাবিবুর রহমান। এসময় স্থানীয় একজন মোবাইরে ধারন করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়।
নির্যাতনের শিকার সুইটি বেগম পরকীয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ১২ বছর আগে রতন মিয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের ৪ বছর পর আমার স্বামী বিদেশ চলে যায়। আমার দুইজন সন্তান আছে। ওয়াহিদ মিয়া আমার শাশুড়িকে ধর্মের মা ডাকে। প্রায় সময় আমাদের বাড়িতে আসে। শনিবার রাতে আমাদের বাড়িতে আসলে জিজ্ঞেস করি কেন আসছেন? সে সময় সে (ওয়াহিদ) বলে একটা সমস্যায় পড়েছি সেই জন্য আসছি। পরে আমি আমার সন্তানদের নিয়ে আমার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ি।
পাশের রুমে আমার শাশুড়ি থাকেন। ঘরের অন্য একটি রুমে ওয়াহিদ মিয়া ছিল। রাত আনুমানিক তিনটার সময় প্রতিবেশী কয়েকজন মিলে ওয়াহিদ মিয়াকে ধরে চিৎকার করতে থাকে। এসময় আমাকেও ঘর থেকে গিয়ে ধরে নিয়ে আসে। দুইজন দুই রুমে ছিলাম। আমাকে অপবাদ দিয়ে সকালে মারধর করা হয়েছে। আমি থানায় একটি মামলা করেছি। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই।
এ বিষয়ে কটিয়াদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, কেউ অপরাধ করলে তাকে মারার অধিকার কোন ব্যক্তির নাই। এই ঘটনায় ৬ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় ভুক্তভোগী সুইটি বেগম মামলা দায়ের করেছেন। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে।



