যুগের চিন্তা
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে একের পর এক দোকান স্থাপনের মতো মহোৎসব শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে সৈকতের কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টে রাতারাতি শতাধিক দোকান তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে,কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অনুমতি পত্র নিয়ে বসানো হচ্ছে এসব দোকান।
যদিও সরকার কক্সবাজারের সৈকত এলাকায় প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে। এই গেজেট অনুযায়ী সৈকতের বেলাভূমিতে স্থাপনা নিষিদ্ধ। কিন্তু আইন না মেনে দীর্ঘদিন ধরে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত থাকায় ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সৈকতের জোয়ার-ভাটার মধ্যবর্তী লাইন থেকে প্রথম ৩০০ মিটার ‘নো ডেভেলপমেন্ট জোন’ উল্লেখ করে এ এলাকায় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না বলে নির্দেশনা দেয় উচ্চ আদালত।

এর প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের জন্য বেলার পক্ষে নোটিশ দেয়া হলে সেখানে লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। এর কয়েকদিন পর অন্তত উচ্ছেদ হওয়া হাজার দোকান আবার বসানো হয়। এসব দোকান থাকলে আবারও নতুন করে দোকান তৈরিকে ঘিরে চলছে নানা আলোচনা।
স্থানীয়রা বলছেন, শুক্রবার রাত থেকে সৈকতের বালিয়াড়িতে বসানো শুরু করে এসব দোকান। ইতিমধ্যে বসানো শতাধিক দোকান একই ধরণের রঙ ও আকৃতির দেখা মিলেছে।
দোকান স্থাপনকারি তারেক নামের এক যুবক জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে টাকা দিয়ে তিনি দোকান বসানোর অনুমতি পত্র নিয়েছেন। এই জন্যই দোকান বসিয়েছেন।
আর এই অনুমতি পত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুগন্ধা ঝিনুক মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জয়নাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘যদি বৈধ হন তাহলে রাতের আধাঁরে কেন দোকান বসাতে হবে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের সাথে অন্যায় হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী একটি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে দোকান বসাচ্ছেন।

ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য বলছে, এই দখল ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন আলোচিত দুই ব্যক্তি জাকির হোসেন ও নূরুল হুদা ওরফে গুরামিয়া। সম্প্রতি তারা নতুন করে ৭৪টি কার্ড কিনেছেন এবং রাতের আঁধারে দোকান বসানোর চেষ্টা চলছে।
অভিযোগের বিষয়ে নুরুল হুদা ওরফে গুরামিয়া সব অস্বীকার করেন। অপর অভিযুক্ত জাকির হোসেন দাবি করেন, তার কেবল একটি দোকান আছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খান বলেছেন, দোকান বসানো ব্যক্তিদের কাগজপত্র প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে। অবৈধভাবে দোকান বসানোর কোন সুযোগ নেই।
জেলা প্রশাসনের অনুমতিপত্রের ব্যাপারে তিনি বলেন, অনুমতি পত্রে বালিয়াড়ি এবং পরিবেশ নষ্ট হয় এমন স্থানে দোকান না বসানোর শর্ত রয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘বীচ দখল করে দোকান বসানো কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে তাদের কাগজপত্র যাচাই চলছে। জেলা প্রশাসন অনুমতি দিলে তাদের কোথায় বসানো হবে স্থান নির্ধারণ করে দেবেন। বালিয়াড়ি বসানো দোকান সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।



