কুড়িগ্রামে দিশেহারা নদীভাঙ্গন কবলিত মানুষ
রাজু মোস্তাফিজ,কুড়িগ্রাম
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম
ছবি-যুগের চিন্তা
অবিরাম বৃষ্টি আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ায় বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন তীব্র রুপ নিয়েছে। ঘরবাড়ি, বাজার ও ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। ঝুঁকিতে পড়েছে সড়ক, স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
গত এক সপ্তাহ পানি বেড়ে যাওয়ায় তীব্র হয়েছে তিস্তার ভাঙন। মাত্র তিনদিন আগে রাজাহাট উপজেলার চর গতিয়াশামে ৭টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এই চরের শাহজাহান, আব্দুর রাজ্জাক, আব্বাস আলী, জাহানবী মিয়া ও বারেক আলী ঘর বাড়ি সরিয়ে উঁচু স্থানে নিয়ে গেছেন।
তারা জানান, ঘূর্ণি রাতের তীব্রতায় ঘরবাড়ি সরানোর সময় মিলছেনা। ঘরবাড়ির পাশাপাশি আমন ক্ষেত নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। ঘরিয়ালডাঙা ইউনিয়নের সাবেক সাবেক ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, এই চরে প্রায় ১০০ পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। নতুন করে বেড়েছে ভাঙনের তীব্রতা।
ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে নাগেশ্বরীর নারায়ণপুর ইউনিয়নের ঝাউকুঠি, পাগলারহাট ও গঙ্গাধরের ভাঙনে বালারহাট এলাকায় আতংক দেখা দিয়েছে। ভাঙনে পাগলারহাট বাজার পুরোটাই বিলীন হওয়ার পথে। বালারহাটে একটি মাদ্রাসা নদীতে হারিয়ে গেছে। বালারহাট বাজারের অর্ধেক চলে গেছে নদীগর্ভে।
নারায়ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা জানান, এই মৌসুমে ২৪০টি পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। তাদের তালিকা উপজেলা পরিষদে দেয়া হয়েছে এবং কিছু ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। তবে ভাঙন রোধে ঝাউকুঠিতে ৫০০ জিও ব্যাগ দেয়া ছাড়া আর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
দুধকুমারের পানি বেড়ে যাওয়ায় নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙা ইউনিয়নের কুটিরচর এলাকায় বেড়েছে ভাঙন। গত ৭দিনে ৪টি পরিবার ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। আমন ধানসহ আবাদী জমি ভাঙনের কবলে পড়েছে। ঝুঁকিতে পড়েছে মসজিদ, দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক। বামনডাঙা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মিনারুল ইসলাম জানান, ভাঙন প্রতিরোধের দাবীতে স্থানীয় উদ্যোগে মানববন্ধন করা হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে চর যাত্রাপুর, রলাকাটা, পশ্চিম ঝুনকার চরে গত ৭দিনে ৫টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে আবাদী জমি। গত দেড় মাসে চর যাত্রাপুরের বানিয়াপাড়ায় শতাধিক পরিবার পরিবার তাদের বসতবাড়ি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। কেউ উঁচু স্থানে মালামাল রেখে আশ্রয় খুঁজছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপুর হাটসহ পুরো গ্রাম নদীগর্ভে চলে যাবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, কুটিরচর, ঝাউকুঠি, পাগলারহাট এলাকায় দীর্ঘ এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে। ধরলা তিস্তা দুধকুমোর সহ বিভিন্না নদ-নদীর ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ব্লোক ফেলা হচ্ছে। তবে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাবনা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।



