চিংড়ি রপ্তানিতে তলানিতে পৌঁছেছে বাংলাদেশ
খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২২ পিএম
ফাইল ফটো
একসময় তৈরি পোশাকের পর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় শীর্ষ খাত ছিল ‘সাদা সোনা’খ্যাত হিমায়িত চিংড়ি। কিন্তু নানা সংকটে এখন এ খাতের অবস্থান নেমে এসেছে ১০ নম্বরে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিমালা না মানা, চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ, উৎপাদন কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও পোনা সংকট—সব মিলিয়ে ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ খাত।
শীর্ষ খাত থেকে পতন
২০২৩-২৪ অর্থবছরের রপ্তানি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ। অন্যান্য সব খাত মিলিয়ে আয় মাত্র ২০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে আছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এরপর পর্যায়ক্রমে কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, কটন ও কটনজাত পণ্য, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা এবং সর্বশেষ ১০ নম্বরে রয়েছে হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে যেখানে ৪৪ হাজার ২৭৮ টন চিংড়ি রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছিল ৫১ কোটি ডলার, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেই আয় নেমে এসেছে ২৪ কোটি ৮৩ লাখ ডলারে। বর্তমানে নিবন্ধিত ১০৯টি প্রক্রিয়াকরণ কারখানার মধ্যে খুলনায় চালু আছে ২০টি এবং চট্টগ্রামে ১৮টি।
অপদ্রব্য ‘পুশ’ ও আন্তর্জাতিক সুনামের ক্ষতি
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তরিকুল ইসলাম জহীর জানান, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ওজন বাড়াতে চিংড়ির ভেতরে ইনজেকশনের মাধ্যমে অপদ্রব্য ঢোকাচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে এ প্রবণতা বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে।
তিনি বলেন, এমন কর্মকাণ্ডে বিদেশি ক্রেতারা চিংড়ি কিনতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে। এতে রপ্তানি ক্রমেই কমছে।
খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপটন সরদার জানান, অপদ্রব্য ঠেকাতে অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে তিনটি কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। তার ভাষায়, প্রক্রিয়াজাত কারখানা হেডলেস চিংড়ি কিনতে পারবে না। মাথাসহ কিনে নিজেরাই হেডলেস করবে। নির্দেশনা না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সংকট
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু অপদ্রব্য নয়, উৎপাদন কমে যাওয়াও বড় সমস্যা। নদী-খাল শুকিয়ে যাওয়া, জোয়ার-ভাটার পরিবর্তন, উন্নত প্রযুক্তির অভাব এবং মৎস্যজীবীদের জন্য কোনো শস্যবিমা বা বিদ্যুৎ ভর্তুকি না থাকা খাতটিকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, কিছু অসাধু জেলে নদীতে বিষ দিয়ে মাছ ধরছে। এতে শুধু মাছই নয়, অন্যান্য জলজ প্রাণীও মারা যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও খুলনা অঞ্চলের নদ-নদীতে।
খুলনা বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. মনিরুল মামুন মনে করেন, সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় বৃহত্তর খুলনা জেলার নদীগুলোতেও উৎপাদন কমছে। তবে বন বিভাগ ও মৎস্য অধিদপ্তর যৌথভাবে কাজ করলে প্রাকৃতিক উৎপাদন কিছুটা হলেও বাড়ানো সম্ভব।



