থানা হাজতে অফিস সহকারির মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান শিক্ষিক ওএসডি
কক্সবাজার প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০৫:২৪ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
কক্সবাজারের চকরিয়া থানা হাজতে দুর্জয় চৌধুরী (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। চকরিয়ায় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারির থানা হাজতে মৃত্যুর ঘটনার তিনদিন পার হলেও মামলা হয়নি।
তবে দূর্জয় চৌধুরী মৃত্যুর ঘটনায় চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানমকে ওএসডি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
রবিবার (২৪ আগষ্ট) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক-১ এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানমকে ওএসডি করে ঢাকাস্থ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, স্কুল কমিটির সভাপতির নির্দেশেই দুর্জয়কে থানায় নেওয়া হয়েছিল। মামলা এন্ট্রি না হলেও একটি জিডি করে (পুলিশের পক্ষ থেকে) সভাপতির নির্দেশে দুর্জয়কে থানায় রাখতে হয় বলে খোদ পুলিশই জানায়।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানম ওই স্কুলের অফিস সহকারি দুর্জয় চৌধুরী চেক জালিয়াতি করে প্রতিষ্ঠানের ২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে চকরিয়া থানায় একটি অভিযোগ করেন। চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.শফিকুল ইসলাম ওই অভিযোগের ভিত্তিতে দূর্জয় চৌধুরীকে হাজতে আটকে রাখেন।
ভোর ৪টার দিকে হাজতে ফাঁসিতে ঝুলানো অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করেন চকরিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভুমি) রুপায়ন দেব। এসময় তিনি নিহত দূর্জয় চৌধুরীর প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করেন। শুক্রবার সকালে দূর্জয়ের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। কিন্তু মর্গে ডাক্তারা না থাকায় বিলম্ব হয় লাশের ময়নাতদন্ত কার্যক্রম। পরে শনিবার ২৩ আগষ্ট ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিকাল ৫টায় দূর্জয় চৌধুরীর মরদেহ সামাজিক শ্মশানে সমাধি দেয়া হয়।
পরবর্তীতে থানা হেফাজতে দূর্জয়ের মুত্যৃর ঘটনায় ওসি , এএসআই ও দুই কনস্টেবলসহ চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করেন। এসপির নির্দেশে চকরিয়া থানায় নতুন ওসি হিসেবে প্রদায়ন করা হয়েছে তৌহিদুল আনোয়ারকে। তবে রবিবার পর্যন্ত নতুন ওসি যোগদান করেননি, আগের ওসিই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
ঘটনার তিনদিন অতিবাহিত হলেও মামলা না হওয়ায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষদের মনে। কিন্তু চকরিয়া থানা পুলিশ বলছে দূর্জয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত কোন অভিযোগ না দেয়ায় মামলা হয়নি।
তিনদিন অতিবাহিত হলেও থানায় এজাহার কেন দেয়া হয়নি জানতে চাইলে নিহত দূর্জয়ের বাবা কমল চৌধুরী বলেন, দূর্জয়ের ময়নাতদন্ত এবং ধর্মীয় রীতিনীতি শেষ হতে সময় লাগছে, তাই মামলা করতে বিলম্ব হচ্ছে। কারা কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত সব কিছু বিশ্লেষন করে মামলা দায়ের করতে চাই। কোন নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন এই ঘটনায় ফেঁসে না যায়। আগামীকালকের মধ্যে মামলা দায়ের করবেন বলেও জানান তিনি।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.শফিকুল ইসলাম বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে এজাহার দিলে অবশ্যই মামলা হিসেবে এন্ট্রি করা হবে। দূর্জয় চৌধুরীর ল্যাপটপ উদ্ধারের জন্য থানার এসআই খায়েরকে স্কুলে পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু ল্যাপটপ ফেরত দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, স্কুল পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তের পরে ল্যাপটপটি থানায় হস্তান্তর করবেন বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।



