বেলকুচিতে অবৈধ ডাইং মিলে বিষাক্ত বর্জ্যে মরছে বিলের মাছ
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০২:৩২ পিএম
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় অবৈধভাবে পরিচালিত প্রসেস ও ডাইং মিলে ফেলা বিষাক্ত বর্জ্যে বিলের মাছ মারা যাচ্ছে। কয়েক দিন ধরে সেন ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামের একটি বিলে শত শত মৃত মাছ ভেসে উঠতে দেখা গেছে। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় মৎস্যচাষিরা।
ক্ষতিগ্রস্ত চাষি আবদুল আলীম জানান, চলতি মৌসুমে তিনি নতুন করে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ অবৈধ কারখানার বর্জ্যের কারণে সব মাছ মরে যায়। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। আলীম বলেন, অবিলম্বে এসব অবৈধ মিল বন্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা জরুরি।
গত ১৪ আগস্ট তিনি সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, তামাই গ্রামের হাজী সিরাজুল রিঅ্যাক্টটিভ ডাইং মিল, বাশার আলী রিঅ্যাক্টটিভ ডাইং মিল, হাবুল্লা রিঅ্যাক্টটিভ ডাইং মিল, হিরণ মুন্সি প্রসেস মিল, হাফেজ মুন্সি ডাইং মিল ও শওকত ফিরোজা ডাইং মিলসহ কয়েকটি কারখানা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এসব কারখানায় বাধ্যতামূলক ইটিপি (এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) না থাকায় প্রতিদিন রাতে মোটরচালিত পাম্প দিয়ে কেমিক্যালযুক্ত বর্জ্য সরাসরি বিলে ফেলা হচ্ছে।
মৎস্যচাষিরা জানান, এ দূষণে শুধু মাছই মারা যাচ্ছে না, কৃষিজমির মাটিও নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে কৃষি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আল মাসুদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। খুব দ্রুত তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম বলেন, অবৈধ প্রসেস মিলের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বেলকুচির ঘটনায়ও পরিদর্শন শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় এসব মিল দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এতে পরিবেশের বিপর্যয় দিন দিন বাড়ছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, এভাবে দূষণ চলতে থাকলে কেবল মাছই নয়, পুরো জলজ প্রতিবেশ ধ্বংসের মুখে পড়বে এবং স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্যও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তারা মনে করেন, অবিলম্বে অবৈধ মিলগুলো বন্ধ না করলে এ অঞ্চলের মৎস্যসম্পদ বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় মৎস্যচাষিদের দাবি, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে এসব কারখানা বন্ধ করুক। তাদের মতে, দেরি হলে মাছ ও কৃষি—দুটোই টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।



