রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে টেকসই সমাধান খুঁজতে কক্সবাজারে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের আট বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। ২০১৭ সালের এদিনে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক নির্যাতন থেকে বাঁচতে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে অবস্থানরতদের নিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ লাখ। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে প্রত্যাবাসনের নানা প্রচেষ্টা চললেও কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।
রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করতে রবিবার (২৪ আগস্ট) থেকে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে তিন দিনের উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। উখিয়ার ইনানীতে সেনাবাহিনী পরিচালিত হোটেল বে-ওয়াচ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজন চলবে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত।
‘টেকঅ্যাওয়ে টু দ্যা হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্যা রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক এ সংলাপ যৌথভাবে আয়োজন করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রোহিঙ্গা ইস্যু বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দপ্তর। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় জানিয়েছে, এ সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ, কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিক্ষাবিদ ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধিসহ অন্তত ৪০টি দেশের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। ২৪ ও ২৫ আগস্ট পাঁচটি কর্ম অধিবেশনে মানবিক সহায়তা, নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও টেকসই সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে। ২৬ আগস্ট অতিথিরা পরিদর্শন করবেন উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির।
এর আগে গত রমজানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আয়োজিত এক সমাবেশে ড. ইউনূস প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন, খুব শিগগিরই রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে ঈদ উদযাপন করতে পারবে। তবে এখনো সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়ন হয়নি। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাখাইনের চলমান অস্থিতিশীলতা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার সফর ঘিরে কক্সবাজারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র থানায় জমা দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে স্থানীয়দের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সহযোগিতা করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনজীবী আব্দুল মান্নান বলেন, রোহিঙ্গা আশ্রয়ের পর আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মহল যদি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, হয়তো শান্তি ফিরবে। সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ও রোডম্যাপ নির্ধারণ হলে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় জানায়, এই সম্মেলন মূলত আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তুতি সভা হিসেবে কাজ করবে।
স্থানীয়দের মতে, কক্সবাজারের এই আয়োজন শুধু কড়া নিরাপত্তা নয়, নতুন আশা-প্রত্যাশারও জন্ম দিয়েছে। আট বছর ধরে থমকে থাকা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবার গতি পাবে কি না, তা নির্ভর করছে এই সংলাপের সাফল্যের ওপর।



