ছবি-যুগের চিন্তা
কক্সবাজারের চকরিয়া থানা হাজতে এক যুবকের মৃত্যুকে ঘিরে নানা প্রশ্ন ও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ এটিকে আত্মহত্যা বললেও পরিবারের দাবি যুবককে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। আর থানা হাজতে প্রচারিত ছবি নিয়ে এটি আত্মহত্যা বলতেও রাজী নন সচেতন মহল।
এ ঘটনায় ইতিমধ্যে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠণ করে চকরিয়া থানার সহকারি উপ-পরিদর্শকসহ ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে স্থাণীয় জনতা।
নিহত যুবক দুর্জয় চৌধুরী (২৭), চকরিয়া পৌরসভার ভরামুহুরী হিন্দুপাড়ার কমল চৌধুরীর ছেলে এবং চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী ছিলেন।
পুলিশের দাবি, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে দুর্জয় নিজের পরনের শার্ট গলায় পেঁচিয়ে হাজতের দরজার গ্রিলে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। শুক্রবার সকালে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুপায়ন দেবের উপস্থিতিতে সুরতহাল তৈরি করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম চেকসহ নগদ ২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্জয়ের বিরুদ্ধে এজাহার দাখিল করেন। পরবর্তীতে স্কুল সভাপতি ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুপায়ন দেবের নির্দেশে তাকে থানা হেফাজতে নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন চকরিয়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম।
নিহতের বাবা কমল চৌধুরী বলেন, 'বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের চেক জালিয়াতি ও নগদ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে দুর্জয়কে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। আসলে গত ১০-১২ দিন ধরে এই অভিযোগে তাকে মানসিকভাবে চাপে রাখা হচ্ছিল। এতে দুর্জয় বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। বৃহস্পতিবার আবারও একই অভিযোগে বিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত একটি কক্ষে জিম্মি করে রাখা হয়। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।'
চকরিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম বলেন, 'দুর্জয় চেক জালিয়াতি করে ও নগদে প্রতিষ্ঠানের ২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগ দায়েরের সময় দুর্জয় আমার সঙ্গে ছিলেন। পরে পুলিশ তাঁকে আটক করে থানা হাজতে ঢুকিয়ে রাখে। এরপর আমি চলে আসি। শুক্রবার সকালে শুনেছি, দুর্জয় হাজতে আত্মহত্যা করেছে। এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা।'
তিনি আরও দাবি করেন, দুর্জয়কে জিম্মি করে রাখা বা খারাপ আচরণের অভিযোগ সঠিক নয়।

থানা হাজতে আত্মহত্যার একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিটি দেখে গেছে নিজের শার্ট গলায় পেঁচিয়ে হাজতের দরজার গ্রিলে ঝুলে আছে দেহ। তবে পা দুইটি মেঝেতে লাগলো। ফলে এটি আত্মহত্যা না বলে দাবি করে স্থানীয় জনতা বিক্ষোভ মিছিল করে থানা ঘেরাও করে। এসময় থানার ওসি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
চকরিয়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, 'মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে এলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।'
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন বলেন. 'ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান তিনি নিজেই। অপর দুই সদস্য চকরিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার অভিজিত দাস, চকরিয়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন। যদি তদন্তে পুলিশের কোনো গাফিলতি পাওয়া যায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের এএসআই ও দুই জন কস্টেবলকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।



