দারিদ্র্য জয় করে স্বাবলম্বী তরুণ উদ্যোক্তা হিমান মূর্মূ
দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১১:২৮ এএম
সবজিখেত পরিচর্যা করছেন হিমান মূর্মূ। ছবি: সংগৃহীত
দিনাজপুরের মির্জাপুর খ্রিষ্টানপাড়ার তরুণ হিমান মূর্মূ দারিদ্র্যের শেকল ভেঙে হয়েছেন স্বাবলম্বী। বাবার মৃত্যুর পর দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা থেমে যায় তার। সংসারের ভার কাঁধে নিয়ে শুরুতে দিনমজুরের কাজ করলেও হাল ছাড়েননি। দৃঢ় মনোবল আর সৃজনশীলতাকে হাতিয়ার করে আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত একজন তরুণ উদ্যোক্তা।
২০০৬ সালে বাবা তারসিউস মূর্মূ মারা যাওয়ার পর পরিবার চালাতে হিমান প্রথমে দিনমজুর হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু মনের ভেতরে স্বপ্ন লালন করতে থাকেন নিজের কিছু করার। অল্প জমিতে নার্সারি গড়ে তুলে সেখানে চিরতা, হারজোরা, হার্বাসো, লজ্জাবতীসহ নানা প্রজাতির ঔষধি গাছ উৎপাদন করেন। পাশাপাশি চাষ করেন লাউ, কুমড়া, শসা, বরবটি, সিম, ঝিঙা, কাঁকরোল, মরিচ, ডাঁটাশাক, আদাসহ বিভিন্ন সবজি।
কৃষিকাজের পাশাপাশি হিমান ঝুঁকেছেন হস্তশিল্প ও কুটিরশিল্পে। বাঁশ দিয়ে তৈরি করছেন মাছ ধরার জাল, বাঁশি, ঝাড়ু, মুরগির খাঁচা, কাঠ দিয়ে বানাচ্ছেন গিটার, দোতারা, হারমোনিয়ামের মতো বাদ্যযন্ত্র। মৃৎশিল্পেও তিনি সমান দক্ষ—গরু, বক, হাতি, দোয়েল, ডলফিন, বনরুইসহ নানান প্রাণীর মূর্তি তৈরি করে ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পচেতনা।
এখন প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন হিমান। নিজের জীবনকে গড়ে তুলেছেন স্বাবলম্বী হিসেবে, আর স্থানীয়দের কাছে হয়েছেন অনুপ্রেরণা।
এলাকার প্রবীণ অ্যালবার্ট হেমব্রম বলেন, হিমান আমাদের গর্ব। এত অল্প বয়সে সে যা করছে, তা দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই। স্থানীয় নারী মেরিনা টুডু বলেন, সে শুধু নিজে কাজ করছে না, অন্য তরুণদেরও উদ্বুদ্ধ করছে।
দিনাজপুর বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক জাহেদুল ইসলাম জানান, হিমান চাইলে সরকারি সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও ঋণ নিয়ে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে পারবেন। তার ভাষায়, দারিদ্র্যের শেকল ভেঙে হিমান আজ স্বপ্নের আলো জ্বালিয়েছেন। তার পথচলা শত শত তরুণের জন্য অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে উঠেছে।



