চুয়াডাঙ্গায় এক বছরে ভেঙেছে দুই-তৃতীয়াংশ সংসার
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:০২ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
চুয়াডাঙ্গায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ। মাত্র এক বছরে জেলায় হওয়া বিয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের সমাপ্তি ঘটেছে তালাকের মাধ্যমে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব ও পরকীয়া এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
চুয়াডাঙ্গা জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে জেলায় মোট ৮ হাজার ১০৬টি বিয়ে নিবন্ধিত হয়। এর মধ্যে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৫২১টি— যা মোট বিয়ের প্রায় ৬৮ শতাংশ।
উপজেলা ভিত্তিক চিত্র
চুয়াডাঙ্গা সদর: বিয়ে ২,২২৬টি, বিচ্ছেদ ২,১৭৭টি
আলমডাঙ্গা: বিয়ে ২,৪৩১টি, বিচ্ছেদ ১,২৩৭টি
দামুড়হুদা: বিয়ে ১,৮২৮টি, বিচ্ছেদ ৯২১টি
জীবননগর: বিয়ে ১,৬২১টি, বিচ্ছেদ ১,০৯৬টি
সবচেয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা সদর উপজেলায়, যেখানে বিয়ে ও বিচ্ছেদের সংখ্যার ব্যবধান মাত্র ৪৯টি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মূল কারণ পরকীয়া, অবিশ্বাস ও দায়িত্বশীলতার অভাব।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার কাজি শামসুল হক জানান, বিবাহ বিচ্ছেদের পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে পরকীয়া। এছাড়া স্বামীর দীর্ঘ প্রবাস জীবন, পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সামান্য ভুল বোঝাবুঝিও বিচ্ছেদকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
একজন নারী জানান, বিয়ের মাত্র ১৪ মাসের মাথায় স্বামীর পরকীয়ার কারণে তার সংসার ভেঙে যায়। অপরদিকে আলমডাঙ্গার এক প্রবাসফেরত পুরুষ বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব ও নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার কারণে তিনি বিচ্ছেদের পথ বেছে নেন।
স্থানীয় সাংবাদিক নাজমুল হক স্বপন মনে করেন, পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হওয়া, সহনশীলতার অভাব, বাল্যবিয়ে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার এ প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করছে। সচেতনতা বৃদ্ধি, পারিবারিক পরামর্শ ও সম্পর্ক রক্ষার সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মারুফ সরোয়ার বাবু বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ অপরাধ নয়, এটি মৌলিক অধিকার। তবে কলহকে বিচ্ছেদে রূপ নেবার আগেই পারিবারিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা উচিত।
ম্যারেজ ও ডিভোর্স কনসালটেন্ট অ্যাডভোকেট আশরাফুল হক উল্লেখ করেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ে এবং বেকারত্ব বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম বড় কারণ।
বিশ্লেষকদের মতে, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, পারিবারিক পরামর্শ বৃদ্ধি, আর্থিক স্বচ্ছতা, দাম্পত্য সম্পর্কে সহমর্মিতা এবং সামাজিক সমঝোতা বাড়ানো গেলে এই প্রবণতা অনেকটাই কমানো সম্ভব।
জেলা রেজিস্ট্রার কর্মকর্তা মো. লোকমান হোসেন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।



