ছবি-যুগের চিন্তা
পঞ্চগড় জেলা দীর্ঘদিন ধরে একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও ব্যথিত করেছে। কয়েকদিন আগে দেবীগঞ্জের একটি কলেজের ছাত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তার রেশ কাটতে না কাটতেই টুনিরহাট এলাকায় এক বৃদ্ধকে হত্যা করা হয়েছে।
সর্বশেষ গত রাতে পঞ্চগড় সিনেমা হল এলাকায় আরেকটি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এনিয়ে পঞ্চগড়ে ৩ উপজেলায় ৯ দিনে ৪ খুন হয়েছে । এরমধ্যে গত রাতে ছুরিকাঘাতে জাবেদ উমর জয় (১৯) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। বুধবার (৬ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে পঞ্চগড় বাজারের সিনেমা হল মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জয় জেলা শহরের পুরাতন ক্যাম্প এলাকার জহিরুল হকের ছেলে।
তিনি পঞ্চগড় পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের কর্মী বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় রাত থেকেই শহরে উত্তেজনা দেখা দেয়। দোকানপাট বন্ধ করে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে শহরের পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে বিক্ষোভ করে তার প্রতিবেশী, সহপাঠী ও বন্ধুরা।
অন্যদিকে পঞ্চগড়ে তেঁতুলিয়ায় বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনের টয়লেট থেকে আল হাবিব (৬) নামের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। গেল মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে সুরতহাল শেষে মরদেহ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা, শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ ফেলে রাখা হয়েছে। নিহত হাবিব ওই ইউনিয়নের শিলাইকুঠি গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে খেলতে বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেনি আল হাবিব। দীর্ঘ সময় খোঁজাখুঁজির পর রাতে পরিত্যক্ত ওই ভবনের টয়লেটে শিশুটির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। উদ্ধারের সময় শিশুটির গলায় একটি শার্ট পেঁচানো এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
অন্যদিকে বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে দেবীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাঝাপাড়া এলাকার একটি ধানক্ষেত থেকে কলেজ ছাত্রী সুলতানা আক্তার (রত্না) মরদেহ উদ্ধার করা হয় । স্থানীয়রা মরদেহ দেখে খবর দিলে দেবীগঞ্জ থানা পুলিশ ও সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করে। মরদেহ উদ্ধারের সময় রত্নার গলায় দাগ পাওয়া যায় এবং তার হাতে মোবাইল ফোনের কাভার ও কাপড়ের ব্যাগ ছিল।
পুলিশ তদন্তে রত্নার ঘর থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করে, যেখানে মহাদেবের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ও তার সাথে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এ ছাড়া রত্নার ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল নাম্বারের কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করা হয়। বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে একই ইউনিয়নের পুণ্ডিপাড়া গ্রামের খোকা বর্মনের ছেলে মহাদেব রায়কে পুলিশ থানা হেফাজতে নেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে মহাদেব হত্যার দায় স্বীকার করে জানায়, রত্না দীর্ঘদিন ধরে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন, কিন্তু তার পরিবার অন্যত্র মহাদেবের বিয়ে ঠিক করে ফেলে। এতে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয় ঘটনার রাতে মহাদেব রত্নাকে বাইরে ডেকে নিয়ে বিয়ে নিয়ে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে মোবাইল ফোন ভেঙে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়। পঞ্চগড় সদর উপজেলার ৪ নং কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের টুনিরহাট বাজারের পাশে একটি পরিত্যক্ত স'মিল থেকে রফিকুল ইসলাম ডুবু (৭০) নামের এক বৃদ্ধের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ । মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে সদর উপজেলার টুনিরহাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রফিকুল ইসলাম ঝাকুয়াপাড়া এলাকার মৃত কালুয়ার ছেলে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম বছরের পর বছর এই পরিত্যক্ত স'মিলে থাকতেন তিনি। তার স্ত্রী অনেকদিন আগেই মারা গেছেন , তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। মেয়ে দুটির বিয়ে হয়েছে । তবে তিনি তার পরিবারের সাথে থাকেন না। অনেকেই বলছেন হয়তো পারিবারিক কলহের জেরে বাড়ি ছেড়েছেন রফিকুল ইসলাম ডুবু ।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সী, মুঠোফোনে বলেন, গেল নয় দিনে যে ৩ উপজেলা চারটি খুন হয়েছে এরমধ্যে দেবীগঞ্জ উপজেলার সুলতানা আক্তার (রত্না) খুনের ঘটনা উন্মোচন করে একজনকে আটক করা হয় ।
গত রাতের পঞ্চগড় বাজারে সিনেমা হল মার্কেটে, জয় হত্যাকান্ডের এক আসামীকে আটক করা হয়, এবং টুনিরহাটের রফিকুল হত্যাকাণ্ডের এবং তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়া বুড়ি ইউনিয়নের আল হাবিব হত্যাকাণ্ডের জড়িতদের এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি তবে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ, সিআইডি ও পিআইবি যৌথভাবে তদন্ত শুরু করেছে।”এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা না গেলেও পুলিশ বলছে, যেকোনো ক্লু পাওয়ার জন্য আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহসহ সম্ভাব্য সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।



