
প্রিন্ট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:০৫ এএম
উত্তরাঞ্চলের বৈষম্য নিরসনে শিক্ষার্থীদের ব্লকেড, ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

অনলাইন ডেস্ক :
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৫:৪৪ পিএম

রংপুরসহ সমগ্র উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) প্রতি বৈষম্য নিরসনের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৮ জুলাই) বেলা ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মিছিল শুরু করে শিক্ষার্থীরা রংপুর নগরীর মডার্ন মোড়ে অবস্থান নেয় এবং ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে। এসময় শিক্ষার্থীরা দাবি পূরণে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ও অসহযোগ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ব্লকেড চলাকালে শিক্ষার্থীরা ‘ইন্টেরিমের দালালেরা হুশিয়ার-সাবধান’, ‘জুলাইয়ে হাতিয়ার, গর্জে উঠো আরেকবার’, ‘রক্ত লাগলে রক্ত নে, তবু আমাদের বাজেট দে’, ‘রক্তের স্রোত উত্তরে, বাজেট কেনো দক্ষিণে?’, ‘ঢাবির সিন্ডিকেট, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ প্রভৃতি স্লোগানে মুখরিত করে তোলে রাজপথ। তারা সরকারের প্রতি আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনের আহ্বান জানায়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সর্বশেষ একনেক সভায় রংপুর অঞ্চল ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কোনো বাজেট অনুমোদন করা হয়নি। এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তত ১১টি সভায়ও বরাদ্দ না পাওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তারা জানান, ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্যান্য উপদেষ্টারা এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন—রংপুর হবে সরকারের প্রথম অগ্রাধিকারভুক্ত বিভাগ এবং বেরোবিকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন করা হবে। কিন্তু সেই আশ্বাস বাস্তব রূপ পায়নি।
আন্দোলনে উপস্থিত ছাত্রজনতা বলেন, ‘রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও নেই মানসম্পন্ন অবকাঠামো, স্বাস্থ্যখাত অবহেলিত, কৃষি খাতে নেই কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন, রংপুর সিটি করপোরেশন এমনকি ব্রহ্মপুত্র-তিস্তার তীরবর্তী মানুষের জন্যও কোনো উন্নয়ন বরাদ্দ নেই। বারবার লাশ দেয় রংপুর, অথচ অবহেলাও পায় এই অঞ্চলই। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র পাড়ের মানুষদের নিয়ে কোনো ভাবনা নেই।’
কুড়িগ্রামের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রে নেই কোনো শাসন ব্যবস্থা, নেই বন্যা প্রতিরোধ পরিকল্পনা। রাজিবপুর, রৌমারী, চিলমারীর শত শত মানুষ প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে, অথচ সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই।’
এসময় তারা সরকারের প্রতি উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন ও তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন রোধের দাবি জানান।
বেরোবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হক বলেন, ‘রংপুর সব সময়ই সরকারের বৈষম্যের শিকার হয়েছে— সব সরকারের আমলেই। অথচ রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে যারা থেকেছেন, তাদের বেশিরভাগই এ অঞ্চলের বাসিন্দা। তবু রংপুরের প্রতি বৈষম্য কমেনি, বরং তা প্রকট হয়ে উঠেছে। চলমান বাজেটে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি—যা একটি স্বাধীন দেশের বাস্তবতায় কল্পনাতীত। এমন বৈষম্য পাকিস্তান আমলেও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে এতটা প্রকট ছিল না। বরাবরই অন্যান্য বিভাগের তুলনায় বাজেট বরাদ্দে রংপুর বিভাগ অবহেলিত। অথচ এক সময়ের অন্যতম সমৃদ্ধ এই অঞ্চল আজও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত।
মডার্ন মোড়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা দুটি প্রধান দাবি উত্থাপন করেন—
১. উত্তরাঞ্চলের বাজেট বৈষম্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং অবকাঠামো খাতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে একটি স্বতন্ত্র আঞ্চলিক কমিশন গঠন।
২. বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্বায়ত্তশাসিত ও পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
দাবি পূরণে শিক্ষার্থীরা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে বেরোবির সব ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা এবং রংপুরে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে ছাত্রজনতা।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা আগামীকাল ২৯ জুলাই ‘আবু সাঈদ চত্বর’ থেকে ‘মার্চ টু ডিসি অফিস’ এবং ‘মার্চ টু বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। সেখানে তারা স্মারকলিপি প্রদান করবেন।