
প্রিন্ট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১০ এএম
নারায়ণগঞ্জ
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে মানবিক ডিসি
তিন দিনের মধ্যে অনুদান বিতরণ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩০ পিএম

কেউ নেই পাশে, একাই এগিয়ে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক। দ্রুত সাড়া দিয়ে প্রশংসায় ভাসলেন নারায়ণগঞ্জের মানবিক ডিসি। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের হকার্স মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ২৫ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
গত শুক্রবার চাষাঢ়ায় অবস্থিত হকার্স মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৩০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ সময় আগুন নেভাতে গিয়ে আহত হন অন্তত পাঁচজন। সহায়-সম্বল হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
গত রবিবার (২০ জুলাই) তারা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানান।
বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক অনাড়ম্বর আয়োজনের মধ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ২৫ জন ব্যবসায়ীকে ২৫ হাজার টাকা করে মোট ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। সঞ্চালনায় ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলমগীর হুসাইন।
অনুষ্ঠানে দুইজন ব্যবসায়ী তাদের বক্তব্যে অগ্নিকাণ্ডে দোকান পুড়ে যাওয়ায় চরম ক্ষতির কথা তুলে ধরেন। তারা একইসঙ্গে দোকান মালিকপক্ষের কাছ থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার আক্ষেপ জানান।
জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সততা বজায় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। নকল ও ভেজাল পণ্য বর্জন এবং মানবিক আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ অসাবধানতাই বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই অনুদান ক্ষতিগ্রস্তদের পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে সহায়ক হবে। ভবিষ্যতে সরকারি সহায়তা এলে তা প্রদান করা হবে। এছাড়া স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের বিষয়েও আলোচনা চলছে।’
অনুষ্ঠানে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে আরও ১০ জনকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
এই তাৎক্ষণিক উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের প্রশংসায় ভাসছেন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
আগুনে পুড়ে যাওয়া জামাল সু স্টোরের মালিক জামাল শেখ বলেন, ‘আমরা রবিবার ডিসি স্যারের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি কালক্ষেপণ না করে আজই আমাদের আর্থিক সহায়তার চেক দিয়েছেন। উনি সত্যিই একজন মানবিক মানুষ।’
আল আমিন রুমি নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ডিসি স্যার যেভাবে দ্রুত সময়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা কোনো প্রশংসায় যথেষ্ট নয়।’
ব্যবসায়ী মকবুল আহমেদ বলেন, ‘মাত্র তিন দিনের মধ্যে ডিসি স্যারের সরাসরি হস্তক্ষেপে আমরা এই সহায়তা পেয়েছি। এটি আমাদের জন্য এক বিশাল প্রাপ্তি।’
আব্দুল হান্নান নামের এক ব্যবসায়ী জানান, ‘ডিসি স্যার আরও আগেই চেক বিতরণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মাইলস্টোন কলেজের বিমান দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রীয় শোক পালন হওয়ায় একদিন দেরি হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আসাদুজ্জামান সরদার, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক গোলাম সরোয়ার প্রমুখ।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও নগরীর সাবেক আমির মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ বলেন, “আমি ব্যবসায়ীদের নিয়ে অনেক জায়গায় গিয়েছিলাম, কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। ডিসি সাহেবই একমাত্র ব্যক্তি যিনি তাৎক্ষণিকভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি নিঃসন্দেহে ধন্যবাদ প্রাপ্য।”
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, জেলা প্রশাসকের আশ্বাস অনুযায়ী ভবিষ্যতে তারা বিনা সুদে বা স্বল্প সুদে ঋণের সহায়তাও পেতে পারেন, যা তাদের ব্যবসায় আবার ঘুরে দাঁড়াতে সহায়ক হবে।
এই মানবিক পদক্ষেপে আবারও প্রমাণ হলো—দ্রুত সাড়া দেওয়া একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাই হতে পারেন জনগণের প্রকৃত আশ্রয়।