নওগাঁয় বৃদ্ধ মাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ায় ছেলে গ্রেপ্তার
নওগাঁ প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ১০:৪২ এএম
ছবি - বৃদ্ধ মাকে নিজের বাড়িতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ছেলে
নওগাঁয় বৃদ্ধ মাকে নিজের বাড়িতে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় একমাত্র ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার নওগাঁ শহরের কাজীর মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। বৃদ্ধ বিলকিস আক্তারের অভিযোগ, সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে তার একমাত্র ছেলে মোস্তাফিজুল ইসলাম সৌরভ তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেননি।
মা থানায় মামলা করার পর রাতে ছেলে সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নওগাঁ সদর সার্কেল) মুশফিকুর রহমান জানান। পুলিশ বলছে, ৭০ বছর বয়সী বিলকিস আক্তারের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছোট মেয়ে কানাডায় থাকেন। বিলকিস আক্তারের স্বামী শহরের কাজীর মোড়ে প্রায় ৩০ বছর আগে ১০ শতক জমির ওপর দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। ওই বাড়ির দোতলার একটি ফ্লাটে তিনি বসবাস করে আসছিলেন।
২০২১ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর আইন অনুযায়ী বিলকিস আক্তার ও তার তিন সন্তান বসতবাড়ির অংশীদার হন। কিন্তু সৌরভ পুরো সম্পত্তি তাকে লিখে দিতে মা ও বোনদের চাপ দিতে থাকেন। এ নিয়ে মা ও ছেলের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ছেলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বিলকিস ২০২১ সাল থেকে বেশিরভাগ সময় নওগাঁ শহরে বড় মেয়ের বাড়িতে থাকছিলেন। সোমবার বেলা ১১টার দিকে তিনি নিজের বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে গেটে তালা মারা দেখতে পান।
এ বিষয়ে সৌরভকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, মাকে তিনি বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না। বাড়িতে ঢুকতে না-পেরে দিনভর নিচতলায় গ্যারেজে বসে থাকেন বিলকিস। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা সেখানে গেলে এই বৃদ্ধা সবকিছু খুলে বলেন।
বিলকিস বলেন, একমাত্র ছেলে তার দেখাশোনা করে না। বোনদের সাথেও ‘দুর্ব্যবহার’ করে। সে সব সম্পত্তি লিখে নিতে চায়। জীবনের বাকি সময়টা স্বামীর স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়িতেই থাকতে চান জানিয়ে বিলকিস বলেন, “এই বাড়িতে আমার অংশ কম বলে ছেলে আগেও আমাকে কটাক্ষ করেছে। মেয়েরা অপমান সইতে না পেরে তাদের অংশ আমাকে লিখে দিয়েছে। এই বাড়িতে কাগজে-কলমে আমার অংশই বেশি। নয় আনা। কিন্তু আমার ছেলে পুরো সম্পত্তি হাত করার জন্য আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দিতে চায় না।”
বিলকিস আক্তারের বড় মেয়ের স্বামী ডা. আবুজার গাফফার বলেন, “আমার শ্যালক এর আগেও শাশুড়িকে নির্যাতন করেছে। এমনকি গায়ে হাতও তুলেছে। এটা নিয়ে মামলাও রয়েছে। নিজের মাকে বলে, তুই দুই আনার মালিক, তুই গিয়ে পাথারে থাক।
“এই কথা শুনে ২০২৩ সালে আমার স্ত্রী ও শ্যালিকা বসতবাড়ির তাদের অংশ মায়ের নামে লিখে দিয়েছে। কাগজে-কলমে আমার শাশুড়ি এখন বসতবাড়ির প্রায় ৭০ শতাংশের মালিক। অথচ তাকেই এখন বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।”
মাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে সৌরভ দাবি করেন, বসতবাড়ি নিয়ে পারিবারিক কলহের পর থেকে তার মা বড় বোনের বাসায় আছেন।
“বাড়ি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। এখন আমার বাসায় আসতে হলে তাকে আদালতের মাধ্যমে আসতে হবে। তাই তাকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছি না।”
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ওই বাড়িতে যান স্থানীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা। তাদের সামনেই বৃদ্ধা বিলকিস আক্তারকে ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন সৌরভ। মায়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলার কারণে কয়েকজনকে মারধরও করেন।
মানবাধিকার কমিশনের নওগাঁ ইউনিটের সমন্বয়ক চন্দন দেব এ সময় বলেন, “বিধবা বিলকিস আক্তার চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দরকার।”
এরপর সন্ধ্যায় নওগাঁ সদর থানায় গিয়ে লিখিত এজাহার দায়ের করেন বিলকিস আক্তার। তিনি থানায় থাকা অবস্থায় রাতে তার ছেলে সোহাগকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।



