Logo
Logo
×

সারাদেশ

সাতক্ষীরায় আড়ত বসাতে নদী দখল

Icon

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১০:০১ এএম

সাতক্ষীরায় আড়ত বসাতে নদী দখল

ছবি - গাছ পুঁতে ও পাকা পিলার বসিয়ে ইট-বালু ফেলে প্রকাশ্যেই চলছে দখল

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে খোলপেটুয়া নদীর তীর দখল করে ইট-বালু ব্যবসার আড়ত বসানোর পাঁয়তারা করছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে, এতে সহায়তা করছেন স্থানীয় দুই প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। গাছ পুঁতে ও পাকা পিলার বসিয়ে সেখানে ইট-বালু ফেলে প্রকাশ্যেই চলছে দখল। প্রায় চার মাস আগে দখলচেষ্টার শুরুতে উপজেলা প্রশাসন সেখানে নোটিশ দিয়ে স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দেয়। গত সপ্তাহে আবারও ওই এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়েছে।


উপজেলার বড়কুপোট ও পদ্মপুকুরের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে খোলপেটুয়া নদীটি। বৃহস্পতিবার সরেজমিন ছোটকুপোট এলাকায় দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে জমি দখলের চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, মঙ্গলবার থেকে তারা নতুন করে সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করেন। এর মধ্যে জামান ব্রিকসের নামে দখল করা হয়েছে প্রায় ৫০০ ফুট দীর্ঘ ও ২০০ ফুট চওড়া জমি। সেটির বেশির ভাগই নদীর ভেতর পড়েছে। এর পাশেই বিশাল জায়গাজুড়ে তাদের একাধিক বালুর আড়ত।


এ প্রতিষ্ঠানের পাশেই মুজিবর এন্টারপ্রাইজ একই কায়দায় প্রায় ৩০০ ফুট দীর্ঘ ও ২০০ ফুট চওড়া জমি দখল করেছে নদীর ভেতর। দুটি প্রতিষ্ঠান সব মিলিয়ে প্রায় তিন একর জমি দখল করেছে। এলাকাবাসী জানায়, প্রতিষ্ঠান দুটি দেশের নানা জায়গা থেকে বালু এনে সেখানে সংরক্ষণ করে।


এ দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় পাঁচশ গজ দূরে নওয়াবেঁকী বাজার এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর চরে স্থাপনা নির্মাণ করছে আটুলিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আব্দুল আজিজের নেতৃত্বাধীন একটি চক্র। তারা নদীতে ভাটার সময় ইট দিয়ে চারপাশে ঘিরে নেন। পরে বালু দিয়ে সেই জায়গা ভরাট করছেন।


জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের নামে গত মার্চের শেষদিকে প্রথম দফায় দখল শুরু হয়। সংবাদ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি সেখানে দখলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে জানিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। মাঝে প্রায় তিন মাস দখল বন্ধ থাকলেও মঙ্গলবার থেকে তিনটি জায়গাতেই স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়। এর আগে এসব এলাকায় গাছপালা কেটে ফেলা হয়।


বড়কুপোট গ্রামের সোহেল রানা জানিয়েছেন, ইট-বালু ফেলে নদী দখলের কারণে স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। এতে খোলপেটুয়া নদীর বিপরীত পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো অংশে নাব্য সংকটও দেখা দিয়েছে। মাঝেমধ্যে প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। তবে দখল ঠেকানো যাচ্ছে না।


বিড়ালাক্ষ্মী গ্রামের সেকেন্দার আলীর ভাষ্য, শুরুতে চর দখল করলেও এখন তারা নদীর মধ্যে ঢুকে পড়েছে। দিনের পর দিন ধরে বড় বড় গাছের বল্লী (পুরো গাছ) পুঁতে ও ইট-বালু ফেলে দখলযজ্ঞ চলছে। ইট-বালু ব্যবসায়ীদের দেখাদেখি আরও অনেকে নওয়াবেঁকী বাজারসংলগ্ন চর ও নদী দখলে মেতেছেন।


স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, দখলকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পেছনে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা রয়েছেন। যে কারণে এলাকাবাসী প্রতিবাদের সাহস পান না। তাদের ভাষ্য, অতীতে এই এলাকায় দখলবাজদের পেছনে থাকতেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বর্তমান সময়ে বিএনপি ও যুবদলের দুই নেতা তাদের সহায়তা করছেন।


এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজের মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। জামান ব্রিকসের মালিক এস কে জামান এলাকায় থাকেন না। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মামুন হোসেনের ভাষ্য, ‘পকেটের পয়সা খরচ করে আমরা নদী বাঁধিয়ে দিচ্ছি, তাতে ক্ষতির কী আছে? আগে থেকে আরও অনেকে দখল করেছে। বর্তমানে করাতকল, মাছের আড়তসহ নানাভাবে দখল অব্যাহত আছে।’


মুজিবর এন্টারপ্রাইজের মালিক মুজিবর রহমানের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক অরবিন্দ মণ্ডলের ভাষ্য, ‘মালপত্র ওঠানোর জন্য নদীর কিনারার কিছু অংশ ভরাট করা হচ্ছে। আমরা মহাজনের আজ্ঞাবহ।’ তিনি আরও বলেন, দু’চারটা গাছ ভরাটের স্বার্থে কাটা পড়েছে।


নওয়াবেঁকী বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান বলেন, তারা দখলে নিষেধ করলেও কেউ শুনছে না। প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক পক্ষের মদদে এসব দখলকাণ্ড চলছে।


জানা গেছে, দখলবাজদের ছত্রছায়া দেওয়ার অভিযোগ মূলত আটুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম মোড়ল ও যুবদল নেতা হাবিবুল্লাহর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে আবুল কালাম মোড়লের দাবি, তিনি দখলের বিষয়ে জানেন না। তাদের নাম ভাঙিয়ে কেউ এসব করতে পারে। মদদ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যুবদল নেতা হাবিবুল্লাহ এতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।


শ্যামনগরের ইউএনও মোছা. রনী খাতুন জানান, আগে থেকেই এসব দখলের প্রক্রিয়া চলছিল। যেসব জায়গায় নদী দখল হয়েছে, সেই জায়গা উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এখন থেকে কেউ দখলের অপচেষ্টা করতে পারবে না।




Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন