রামগঞ্জে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর), প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম
রামগঞ্জ পৌরসভায় কোটেশন কাজে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দূ্র্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত অর্থ বছরে প্রশাসক ও মিটিং রুম ২টির সংস্কার ও ডেকোরেশন কাজে ২৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ কাজে পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ারের যোগসাজসে টেন্ডার ছাড়া কোটেশন প্রক্রিয়ায় কাজগুলো পায় মাহমুদা কর্পোরেশন,ইব্রাহিম এন্ড বাদার্স ও মাসুম এন্ড রবিন নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বিধি বর্হিভূতভাবে এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করেন পৌরসভার কর্মচারিরা।
সূত্রে জানা যায়, পৌরসভা ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) ও রাজস্ব ফান্ড(আরইভি) খাত থেকে রুম ২টি সৌন্দর্য বর্ধনে রং,টাইলস,ইলেকট্রিক,ডেকোরেশন,এয়ার কনডিশন(এসি) ও ফার্নিচারের জন্য কোটেশনের মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। গৃহিত প্রকল্পে প্রশাসক রুম ও মিটিং রুমের প্লাষ্টার,রং ও টাইলসের কাজের জন্য ২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, ৩টি এসি(প্রতিটি ২টন) ৫ লাখ ৫০ হাজার, ইলেট্রিক কাজ ও কনফারেন্স টেবিলের জন্য ৬ লাখ ২৮ হাজার টাকা,ডেকোরেশনের জন্য ১৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা চুক্তিমূল্য ধরা হয়।
এ ছাড়াও বিধি বর্হিভূতভাবে পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাকির হোসেন হেলালের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাহমুদা কর্পোরেশন,পৌরসভার হিসাব রক্ষক ইব্রাহিমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইব্রাহিম এন্ড বাদার্স ও তাদের প্রতিবেশী আক্তার হোসেনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাসুম এন্ড রবিন নামে কাজগুলোর বিল উত্তোলন করে নেয়। ইব্রাহিম এন্ড বাদার্স নামে পৌরসভা ভবনের রংয়ের কাজসহ (যার চুক্তি মূল্য ৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা) এ সব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে আরো কয়েকটি কোটেশনে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।
ইমাম হোসেন, কামাল, সেলিম, আনোয়ার হোসেনসহ পৌরসভার কয়েক বাসিন্দা পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারি হয়েও বিধি বর্হিভূত ঠিকাদারী কাজ করার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জানান, তাঁরা প্রথমে ইঞ্জিনিয়ারকে ম্যানেজ করে উচ্চমূল্যে কাজের সিডিউল করে নেন। পরে কোটেশনে কাজ গুলো করান। না হয় ২টনের ৩টি এসির চুক্তিমূল্য কোনভাবে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা হতে পারে না। তারা কোটেশনে গৃহিত প্রকল্পের কাজে বেশী অনিয়ম ও দূর্নীতি হচ্ছে দাবী করে পৌর প্রশাসকসহ উর্ধতœন কর্তৃপক্ষের নিকট তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।
মেসার্স মাসুম এন্ড রবিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটর আক্তার হোসেন জানান, পৌরসভার হল রুম ও প্রশাসকের রুমের কাজ কোটেশনে করা হয়েছে। বিশ^স্ত মনে করে আমার লাইন্সেসে ২টি প্রকল্প দিয়েছেন। আমি এ কাজে এক কাপ চায়ের টাকা নেই নাই। অফিসে লোকজন সব টাকা ব্যয় করেছেন।
পৌরসভার হিসাব রক্ষক মোঃ ইব্রাহিম জানান, আমার নামে ইব্রাহিম এন্ড বাদার্স ঠিকাদারি লাইন্সেসটি আইনগত সমস্যা হতে পারে বিধায় আমার শালার নামে এফিডেভিট করে দিয়েছি। প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাকির হোসেন হেলালের লাইন্সেসটি তাঁর স্ত্রীর বড় ভাইয়ের নামে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে পৌরসভার কয়েক কর্মকর্তা ও কর্মচারি জানান, পৌরসভা কর্মচারি চাকুরী বিধিমালা,১৯৯২ এর ৫ ধারা অনুযায়ী কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারি নিজে বা তার পোষ্যরা স্বনামে কিংবা বেনামে পৌরসভার কোন প্রকার লাভজনক কাজে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। এই বিধি থাকলেও পৌরসভার জাকির হোসেন হেলাল ও হিসাব রক্ষক মোঃ ইব্রাহিম দীর্ঘদিন থেকে পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি করছেন। তাদের লাইন্সেস দুইটিতে প্রোপাইটর তারা না হলেও ফাইল,চেক স্বাক্ষরসহ সকল কার্যক্রম তারা নিজেরা পরিচালনা করেন। তাঁরা ফ্যাসিবাদের শাসন আমলে মেয়র আস্থাভাজন ছিল। বর্তমানে তাঁরা উর্ধত্নন স্যারদের আস্তাভাজন। এ জন্য কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না।
পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রতিটি কাজ এলজিইডি সিডিউল অনুযায়ী প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছে। কাজও বিধি অনুযায়ী হয়েছে। অনিয়মের বিষয়টি সঠিক নয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক সাঈদ মোহাম্মদ রবিন শীষ জানান, তদন্ত করে কাজের কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে ,এ সব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।



