Logo
Logo
×

সারাদেশ

হিমাগার সিন্ডিকেট : অসহায় আলু চাষি-ব্যবসায়ীরা

Icon

জয়পুরহাট প্রতিনিধি :

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ০২:৫৭ পিএম

হিমাগার সিন্ডিকেট : অসহায় আলু চাষি-ব্যবসায়ীরা

ছবি - সংগৃহীত

ভরপুর উৎপাদন এবং মৌসুমে দাম না পেয়ে লাভের আশায় এবার হিমাগারে আলু সংরক্ষণের দিকে ঝোঁকেন অনেক চাষিব্যবসায়ীএখন হিমাগার থেকে সেই আলু বের করতে গিয়ে নতুন সংকটে পড়েছেন তারাগুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়াচাষি ও ব্যবসায়ীরা জোট বেঁধে এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করেও ভাড়া কমাতে পারেননি। বাড়তি ভাড়া আদায়ে অনড় হিমাগার মালিকরা। এ পরিস্থিতিতে হিমাগারের আলু কেনাবেচা বন্ধ রয়েছে। সংকট নিরসনে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।


জয়পুরহাটে আছে ১৯টি হিমাগার। সবগুলোই আলুতে ঠাসা। মৌসুমে এবার প্রায় আড়াই লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। খাবার আলু ১ লাখ ৯০ হাজার টন আর বীজ ৬০ হাজার টন। খাবার আলুর জেলায় প্রয়োজন ৪০ হাজার টন। অধিকাংশ আলু বিক্রি হয় বিভিন্ন জেলায়। বাজারে দাম কম এবং হিমাগার ভাড়া বাড়ার কারণে এখন পর্যন্ত মজুত আলুর ৫ শতাংশও বিক্রি হয়নি। অথচ গত বছর এ সময় ৫০ শতাংশেরও বেশি আলু বিক্রি হয়েছিল।

আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়েছে ১৭ থেকে ১৮ টাকা। হিমাগারে সংরক্ষণ করতে গিয়ে ভাড়া ৬.৭৫ টাকা এবং শ্রমিক, সুতলি, পরিবহন ও লোড-আনলোড মিলে পড়েছে আরও ২ টাকা। সবমিলে প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে ২৭ টাকা। এখন হিমাগার থেকে কেজিপ্রতি আলুর দাম মিলছে ১১ থেকে ১২ টাকা। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা। ফলে কয়েক বছরের লাভসহ মূলধন হারাতে বসেছেন তারা।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এবার জয়পুরহাটে ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ৪৩ হাজার টন। অতিরিক্ত জোগান এবং রপ্তানি কম হওয়ায় এবার সর্বনিম্ন দামে আলু বেচাকেনা হচ্ছে। পাইকারি বাজারে গত পাঁচ বছরের চেয়ে এবার বিভিন্ন জাতের আলু প্রতিবস্তা (৬৫ কেজি) ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এটি মৌসুমের দামের চেয়ে কম।


এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, এ বছর দাম না পাওয়ায় পরের মৌসুমে কমসংখ্যক চাষি আলু চাষ করবেন। যখন আলু চাষ কম হবে, তখন দাম বেড়ে যাবে। সরবরাহ কম হলে চাহিদা বাড়ে। তখন পরের বছর কৃষক আবার আলু চাষ বাড়িয়ে দেবে। আবার চাহিদা কমে যাবে। এই সাইকেল পদ্ধতিতে সরকারের একটি নীতিমালা থাকা দরকার। তিনি আরও বলেন, যেসব এলাকায় আলু হয়, সেখানে কত হেক্টর জমিতে হবে, চাহিদা কতটুকু, আর আলু চাষ করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিতে হবে। এটা যদি না হয়, তাহলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। চাষি ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মনগড়া ভাড়া বাড়িয়েছেন হিমাগার মালিকরা। গত বছর প্রতি কেজি ৭ টাকা করে বস্তা (৬৫ কেজি) ভাড়া নেওয়া হয়েছে ৩৫০ টাকা। এবার ভাড়া কমিয়ে কেজি ৬.৭৫ টাকা করা হলেও বস্তাপ্রতি নেওয়া হচ্ছে ৪২০ টাকা। হিমাগার মালিকদের এসব চাতুরীতে অসহায় চাষি-ব্যবসায়ীরা। ভাড়া কমানোর দাবিতে মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনও করেছেন তারা। এক পর্যায়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিমাগার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে প্রতি বস্তার ভাড়া ৩৫০ টাকার ঘোষণা দিলেও পরে মালিকরা তাদের সিদ্ধান্তেই অনড় রয়েছেন


ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, হিমাগার ভাড়া তাদের বিপদে ফেলছেঋণ নেওয়া সুদের টাকা তো আছেইতাদের ওপর জুলুম চালানো হচ্ছেচাষি গোলজার রহমান বলেন, কৌশল করে ভাড়া বাড়িয়েছেন হিমাগার মালিকরা


আলু রপ্তানিকারক শ্রীলঙ্কার হংফং কোম্পানির প্রতিনিধি আব্দুল বাসেদ বলেন, এবারের চিত্র উল্টোগত বছর রপ্তানিতে সরকারের পক্ষ থেকে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল, এবার কমে ১০ শতাংশ করা হয়েছেফলে রপ্তানি নেই বললেই চলে


জয়পুরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, গত বছরসময় ৪৮ টাকা থেকে ৫২ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি হয়েছেএবার ১২ টাকা থেকে ১৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে

বৃহত্তর বগুড়া কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষকালাই আর বি স্পেশালাইজড কোল্ডস্টোরেজের মালিক প্রদীপ কুমার প্রসাদ বলেন, সবকিছু বিবেচনা করে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন ভাড়া নির্ধারণ করেছেতারপরও অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেচাষিব্যবসায়ীরা যেসব অভিযোগ করছেন তা মিথ্যা


পুনট হিমাগারের ব্যবস্থাপক বিপ্লব কুমার ঘোষ বলেন, ভাড়া নিয়ে মালিকদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক চলমানমালিকপক্ষ প্রতি বস্তার ভাড়া ৩৮০ টাকা করে নেওয়ার কথা বলেছেন, আর প্রশাসন ৩৭০ টাকা করে নিতে বলেছেনশিগগির এর একটা সমাধান হবে


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভিন বলেন, এবার বেশির ভাগ কৃষকই লোকসানে পড়েছেনএই লোকসান শুধু অর্থনৈতিক নয়, চাষি-ব্যবসায়ীদের মানসিকসামাজিক জীবনে প্রভাব ফেলছে


কালাইয়ের ইউএনও শামীমা আক্তার জাহান বলেন, হিমাগার মালিকদের সঙ্গে কয়েক দফা সভা হয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার তারা প্রতি বস্তা ৩৮০ টাকা করে নেওয়ার প্রস্তাব করেছে। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৭০ টাকা করে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যদি এর বেশি নেয় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন