
প্রিন্ট: ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
টঙ্গী পাইলট গার্লস কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ

স্টাফ রিপোরর্টার :
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৫:২৭ পিএম
-686baf3a2a272.jpg)
ছবি-সংগৃহীত
গাজীপুর মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজে শিক্ষক নিয়োগে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন। এইসব অনিয়ম ও লুটপাটের ঘটনায় ভুক্তভোগীসহ অভিভাবক ও অভিভাবিকাবৃন্দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঐতিহ্যবাহী টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজে দীর্ঘদিন যাবত সুনামের সহিত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আলাউদ্দিন মিয়া। তিনি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ধরে রাখতে গিয়ে অনেক কষ্ট করেছেন। অনেক গরিব, অসহায় ছাত্রছাত্রীদের অল্পবেতনে লেখাপড়া করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এমনকি যেসকল ছাত্র-ছাত্রীরা বেতন ও পরীক্ষার ফি দিতে পারেনি তাদেরকেও তিনি সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক-শিক্ষিকা অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতি করলে তিনি সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দায়েরকৃত হত্যা মামলায় বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।
অপরদিকে কলেজ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পান হারুন অর রশিদ। তিনি দায়িত্ব পাওয়ায় অভিভাবক-অভিভাবাবিকা ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ১৯৯২ সালে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ পান হারুন অর রশিদ। ওই সময় কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত না থাকার কারণে ১৯৯৪ সালে সহকারী শিক্ষক হিসাবে স্কুল শাখায় এমপিওভুক্ত নেন তিনি। আবার ২০০০ সালে যখন কলেজ এমপিওভুক্ত হয়, তখন ১৯৯২ সালের নিয়োগ দেখিয়ে পুনরায় কলেজ শাখায় প্রভাষক হিসাবে এমপিওভুক্ত নেন। যার কারণে ২০০০ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একাউন্টে ট্রেজারী চালান এর মাধ্যমে অবৈধভাবে স্কুল শাখা থেকে উত্তোলিত টাকা ফেরত প্রদান করতে বাধ্য হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষকরা জানান, চলতি এইচ এসসি মডেল টেষ্ট পরীক্ষায় উত্তোলনকৃত প্রায় ৬ লক্ষ এবং এস এস সি পরিক্ষার ৪৮০০০০ টাকা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুনর রশিদ, শিক্ষক প্রতিনিধি আনিছ ও রাজু মাস্টার ভাগভাটোয়ারা করে নিয়ে গেছে। দায়িত্ব নিয়ে তারা যেভাবে লুটপাট, অনিয়ম শুরু করেছেন এতে অভিভাবক-অভিভাবিকা ও সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাধছে।
সূত্রে আরো জানা যায়, ইংরেজি শিক্ষক মোনায়েমের কাছ থেকে ৩ লক্ষ, লিটনের কাছ থেকে ৩ লক্ষ, হিসাব বিজ্ঞানের জাকিরের কাছ থেকে ২লক্ষ ৫০ হাজার, অর্থনীতির শিক্ষক রহিম এর কাছ থেকে ৩ লক্ষ, ব্যবস্থাপনা শিক্ষক জামরুল এর কাছ থেকে ২লক্ষ, গণিত শিক্ষক আতিয়ার এর কাছ থেকে ২লক্ষ ৫০ হাজার, বিজ্ঞান এর শিক্ষক সোহেলী মুমুর কাছ থেকে ২লক্ষ ৫০হাজার টাকা নেন। এছাড়াও হিসাব বিজ্ঞানে ১ম স্থান অধিকার করা অমিত হাসানের কাছে স্কুলে চাকুরির জন্য ৪ লক্ষ টাকা দাবী করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুনর রশিদ ও রাজু মাস্টার। ৪লক্ষ টাকা না দেওয়ায় অমিত হাসানের চাকুরি হয়নি।
একাধিক ছাত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক্য স্থাপন ও অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়া বাংলার প্রভাষক এমদাদুল হকের নারী কেলেংকারির অভিযোগে গত ১৫ আগষ্ট ২০২৪ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাপে পদত্যাগের ভয়ে পলাতক ছিলেন। পরে কলেজ অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া বৈষম্য বিরোধী মামলায় ২২ এপ্রিল গ্রেফতার হন। এরপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুন ও শিক্ষক প্রতিনিধি আনিসকে ১০ লক্ষ টাকা প্রদান করে ২৭ এপ্রিল ২০২৫ থেকে পুনরায় কলেজে নিয়মিত আসছেন। উল্লেখ্য যে,ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ও অশোভন কথোকপন এর ৭৫ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ড ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যা প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
অপরদিকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের গাজীপুর মহানগর শাখার সভাপতি সরকার বাবুর বোন স্কুল শাখার শিক্ষক জাহানারা বৈষ্যম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর ভয়ে পালিয়ে দীর্ঘ ৭ মাস কলেজে আসেননি তার কাছ থেকেও সবকিছু ঠিকঠাক করে দেওয়ার কথা বলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুনর রশিদ ৬ লক্ষ টাকা দাবি করেন। টাকা দেওয়ার পর তিনিও ২৪ এপ্রিল হতে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন।
এইচ এসসি পরীক্ষার্থী নার্গিস আক্তারের বাবা রশিদ জানান, বাবা মায়ের পরেই শিক্ষকদের অবস্থান, আর সেই শিক্ষকই যদি ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব দেয় ও সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্ট করেন তাহলে আমরা কোথায় যাবো। এরকম একজন চরিত্রহীন লোক শিক্ষক নামে কলংক এমদাদকে পুনরায় কলেজে আসার সুযোগ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অন্যায় করেছেন তার বিচার আল্লাহই করবেন।
এব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার ও সভাপতির নাম ব্যবহার করে কিছু টাকা লেনদেন হয়েছে আমিও শুনেছি তবে এতো টাকা না। আমি এই লেনদেনের সাথে জড়িত না। যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বাংলার শিক্ষক এমদাদকে মানবিক কারনে জয়েন্ট করিয়েছি কোন অর্থের জন্য নয়।
এ বিষয়ে স্কুলের সভাপতি ড. দিলরুবা খানমের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার কাছে এমন কোন অভিযোগ আসেনি আসলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবো।