
প্রিন্ট: ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৮ পিএম
কমলনগরে এলজিইডির সড়কে ব্যাপক অনিয়ম, সংস্কারের মধ্যেই সড়ক চলাচল অনুপোযোগী

লক্ষ্মীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১১:৪৩ এএম

ছবি- সংগৃহীত
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরলরেঞ্চ ইউনিয়নের হাজীগঞ্জ-বাতিরঘাট সড়ক সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার আগেই সড়কের একাধিক স্থানে মাটি দেবে গিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়কের পাশে খালপাড়ে নির্মাণাধীন গাইড ওয়ালে ফাটল ধরেছে এবং তা খালের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এতে করে যে কোনো সময় ওয়ালটি ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
শনিবার (৫ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে সড়কটির ডাকাতিয়া পোলের গোড়ায় পরিদর্শনে গেলে অনিয়মের এমন ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়।
এসব অনিয়মের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার কাদির পন্ডিতের উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। তারা সড়কের সঠিক মান নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে হাজীগঞ্জ-বাতিরঘাট সড়কের এক হাজার ১৯০ মিটার সংস্কারে ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। কাজটি পায় মেসার্স তাহমিনা এন্টারপ্রাইজ। তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন কাজী বেলাল নামে অন্য এক ঠিকাদার। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে পুরো বরাদ্দ লুটে নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।
স্থানীয় কাদির পন্ডিতের উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, সংস্কার কাজটি এমনই নিম্নমানের ও দায়সারাগোছের। এক সপ্তাহ না যেতেই সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাটি দেবে গিয়ে যান চলাচল দূরে থাক, ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসীর হেঁটে যাতায়াত অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসীর পক্ষে চর লরেন্স ইউনিয়নের জামায়াতের আমির মাওলানা মোঃ আনোয়ার হোসাইন বলেন, নামমাত্র কাজ দেখিয়ে নিম্নমানের ইট ও বালি দিয়ে সংস্কারের নামে সরকারি লাখ লাখ টাকা লুটে নিয়েছে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দুপাশের গাইড বাঁধে ব্যবহৃত ব্লকগুলো অতি নিম্নমানের হওয়ায় বসানোর পরপরই ভেঙে অনেকাংশে বিনষ্ট হয়ে পড়েছে। খানাখন্দে পানি জমে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মেসার্স তাহমিনা এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী মোঃ ডালিম জানান, তার লাইসেন্সটি অফিসিয়ালি ব্যবহার করছেন জনৈক কাজী বেলাল। কাজের প্রকৃত সিডিউল, বাস্তবায়ন ও বিল-ভাউছার সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই।
অপরদিকে কাজী বেলাল জানান, নির্ধারিত সিডিউল মেনেই সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছিলো। তবে সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল ও বর্ষার কারণে এই অবস্থা হয়েছে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে বালি ধুয়ে-মুছে এখন কিছুটা ফাঁকা দৃশ্যমান হতে পারে। এছাড়া বরাদ্দের মধ্যে রাস্তার অপর অংশে কার্পেটিং করা হয়েছে। সেটির মাটি ও রঙের কাজ এখনও চলমান বলে উল্লেখ করলেও প্রথমে সকল কাজ সমাপ্তি বলে দাবি করেছেন তিনি।
এদিকে এলজিইডির বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির প্রসঙ্গে কমলনগর উপজেলা নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মোঃ শরীফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা এলজিইডির প্রতিটি প্রকল্পে অনিয়ম ও দূর্নীতিতে ভরপুর। অতি সম্প্রতি দুদক, চাঁদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের একটি টিম সরেজমিন সড়ক নির্মান প্রকল্পের দূর্নীতির সত্যতা পায়। এলজিইডি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই অনিয়ম-দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। আমরা সকল প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঠিক বাস্তবায়ন দাবি করছি।
কমলনগর এলজিইডির প্রকৌশলী আবদুল কাদের মোজাহিদ সড়ক দেবে যাওয়ার সত্যতায় বলেন, বৃষ্টি মওসূম শেষে ওই স্থানে পূণঃমেরামত করার জন্য পরিকল্পনা রয়েছে। এব্যাপারে ঊর্ধ্বতন নির্বাহী প্রকৌশলী জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাহাত উজ-জামান বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ সড়কের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।