
প্রিন্ট: ২৮ জুলাই ২০২৫, ০২:৫০ এএম
ছেলে সন্তান না থাকায় ভাই-ভাতিজার অত্যাচার

লক্ষ্মীপুর প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ০৯:৫৬ পিএম

ছবি-যুগের চিন্তা
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ছেলে সন্তান না থাকায় শেষ বয়সে এসে বিপাকে পড়েছেন বিটিসিএল কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন(৭০)। সম্পত্তির লোভে ভাই এবং ভাতিজাদের অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। নিজ বাড়ির ফল-ফলাদি, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও পুকুরের মাছ জোরপূর্বক নিয়ে যাচ্ছে তারা। অবস্থা এমন বেগতিক পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে নিজের ক্রয় করা সম্পত্তিও ভোগ করতে পারছেন না তিনি। জোরপূর্বক দখল করে নিচ্ছে ভাই ও ভাতিজারা।
শুক্রবার সকালে আবুল হোসেনের ক্রয় করা সম্পত্তির উপর নির্মান করা দোকানঘর লাঠিসোঁটা নিয়ে জোরপূর্বক দখল করেন তার ভাই ও ভাতিজারা। এসময় তারা সীমানা পিলার দিয়ে নেটের বেড়া লাগিয়ে দখলে নেন। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তাদেরকে দখল কাজে থেকে বিরত রাখেন।
ঘটনাটি রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বান্দেরহাট বাজার সংলগ্ন আবুল হোসেনের বাড়িতে। তিনি ওই এলাকার মৃত শাহ আলমের ছেলে।
অভিযুক্তরা একই এলাকার আবুল কাশেম, আবুল কালাম, সিদ্দিকুল্লা, হেলাল, মনোয়ার হোসেন ও জান্নাত বেগমসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা।
তারা ভুক্তভোগীর ভাই ও বোন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী আবুল হোসেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডে (বিটিসিএল) চাকরি করতেন। ২০১৭ সালে চাকরি জীবন থেকে অবসরে যান তিনি।
আবুল হোসেনেরা ১৩ ভাই ও চার বোন রয়েছে। চাকরি জীবনে তিনি ভাই ও বোনদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন।
সংসার জীবনে আবুল হোসেনের চার কন্যা সন্তান রয়েছে। তিন মেয়ের বিয়ে দেওয়ায় এবং ছোট মেয়ে পড়ালেখার জন্য ঢাকায় থাকায় তিনি স্ত্রীসহ ওই বাড়িতে থাকেন।
ছেলে সন্তান না থাকায় তার সম্পত্তির উপর ভাইদের লোভ পড়ে। কন্যা সন্তানেরাও বাড়িতে না থাকার সুযোগে সম্পত্তির লোভে আবুল হোসেনের উপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিকসহ নানা অত্যাচার।
জানাা যায়, আবুল হোসেন ১৯৯২ সালে স্থানীয় ৪ জন এবং ওনার নিজ বাবাসহ মোট ৫ জন থেকে ৭৪ শতাংশ জমি ক্রয় করেন এবং ১৯৯৪ সালে এই বাড়ি করেন। ২০১৭ সালে বাড়ির দরজায় ৪ টি দোকানঘর নির্মাণ করেন।
এরপর আবুল হোসেনের কোন ছেলে সন্তান না থাকায় তিনি ২০২১ সালে তার ৪ মেয়েকে রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে ওই জমি দান করে দেন। তারপর থেকেই আবুল হোসেনের উপর তার ভাই ও ভাতিজারা অমানসিক অত্যাচার শুরু করেন।
অভিযুক্ত ভাইয়েরা পরে ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভূমি অফিস স্থানীয় ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে (তহশিলদার) তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেন।
চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে উপজেলা ভূমি অফিসে আবুল হোসেনের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনের পর মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যেই মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই অভিযুক্তরা জোরপূর্বক শুক্রবার সকালে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্র নিয়ে অভিযুক্ত আবুল কাশেম গংরা দোকানঘরে বেড়া দিয়ে তা দখল করে নেয়।
ভুক্তভোগী আবুল হোসেন জানান, আমার ক্রয় করা জমির উপর বাড়ির দরজায় কয়েকটি দোকান নির্মাণ করি। আমার তিন মেয়ে বিয়ে দিয়ে আমি বাড়িতে একাই থাকি। আমার ভাই ভাতিজারা আমার কোন ছেলে সন্তান না থাকার সুযোগ নিয়ে তারা এই জায়গা দখল করার পায়তারা করেন। আজ সকালে আবুল কাশেম, কালাম, সিদ্দিকুল্লা, হেলাল, জান্নাতসহ তারা সংঘবদ্ধ ভাবে দা, ছেনি, লাঠি ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্লাস্টিকের বেড়া দিয়ে জায়গাটি দখলে নিয়ে নেন।
তিনি আরো বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তি সকল ভাই-বোন তাদের প্রাপ্য বুঝে নিয়েছে। এখন আমার ক্রয় করা সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করতে চায়।
স্থানীয় থানায় বিষয়টি জানানোর পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অভিযুক্ত আবুল কাশেমের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ কবির হোসেন জানান, জায়গা দখলের একটি অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।