
প্রিন্ট: ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৫:৫৬ পিএম
ট্রেনে বালু পরিবহনে পঞ্জগড়ে পরিবর্তনের হাওয়া

পঞ্চগড় প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ০৮:২০ পিএম

ছবি-সংগৃহীত
বালু পরিবহনে এবার ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রেন। উত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে বালুভর্তি বগি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছেড়ে যায়। এতে পরিবহন ব্যয় ও সময় কম লাগে। রেলপথে বালু পরিবহনে খুশি শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। উত্তরে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, দেশজুড়ে পঞ্চগড়ের মোটা বালুর চাহিদা রয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক বালু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। উত্তোলন, পরিবহনসহ বিভিন্ন সেক্টরে অন্তত ১০ হাজার মানুষ যুক্ত। এতদিন এখানকার বালু পরিবহনের জন্য একমাত্র বাহন ছিল ছোট-বড় ট্রাক। নামমাত্র টাকায় বালু কিনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সেটা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। এতে বালুর দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
চলতি মাসের ৩ জুন প্রথমবারের মতো ৩০ বগিতে বালু পরিবহন শুরু হয়। বালুভর্তি আরেকটি ট্রেন দু-একদিনের মধ্যে ছেড়ে যাবে। রেলপথে স্বল্প খরচে বালু পরিবহনের ফলে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এখানকার পরিত্যক্ত সমতল জমি থেকে বালু উত্তোলন চলছে। এছাড়া জেলার ৩৪টি নদী থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টন বালু উত্তোলন করা হয়। এসব বালু পরিবহন হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দক্ষ চালক সংকট, সড়কে নানান কারণে অতিরিক্ত খরচের কারণে ট্রাকে বালু পরিবহনে অতিরিক্ত খরচ গুনতে হয়। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় কেনা বালু ঢাকা ও গাজীপুরে পৌঁছাতে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হতো। আবার ট্রাক না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হতো ব্যবসায়ীদের। তবে রেলপথে একই পরিমাণ বালু পরিবহনে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
জেলার কমলাপুর এলাকায় দেখা যায় বগিতে বালু লোড হচ্ছে। কয়েকটি বগি স্টেশনের মূল লাইনে সংযোগ করা হয়। ট্রেনটি দু-একদিনের মধ্যে এ স্টেশন ছেড়ে যাবে। তবে যমুনা সেতু দিয়ে সরাসরি ঢাকায় বালু পাঠাতে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এতে ট্রাকের তুলনায় পরিবহন খরচ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে যাবে।
আব্দুল আওয়াল নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘আগে অটো চালাতাম। প্রতিদিন আয় হতো প্রায় ৫০০ টাকা। ২০০ টাকা কিস্তি দিয়ে সংসার চলতো না। এখন বালু উত্তোলনের কাজ করি। প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় হয়। শুনলাম এখন নাকি ট্রেনে বালু জেলার বাইরে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য ভালো খবর।’
বালু ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাকে বালু পরিবহন আমাদের নানান সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় ট্রাক পাওয়া যায় না। সড়ক পথে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। ট্রেনে নিয়মিত বালু পরিবহন করা হলে আমাদের অর্থ ও সময় কমবে।’
এ বিষয়ে পঞ্চগড় রেলস্টেশনের মাস্টার মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘রেলপথে বালু পরিবহনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এখান থেকে একটি মালবাহী ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট সময়ে বালু পাঠাতে পারছেন। এতে ব্যবসায়ীদের আস্থাও বেড়েছে। প্রয়োজন হলে এ ট্রেনে আরও বগি সংযুক্ত করা হবে।’
জেলা প্রশাসক মো.সাবেত আলী বলেন,স্থানীয় অর্থনীতির বড় একটি অংশের জোগান আসে বালু পাথর থেকে। নিয়মিত রেলপথে বালু পরিবহন শুরু হলে এখানকার অর্থনীতিতে বড় একটা প্রভাব পড়বে।