
প্রিন্ট: ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৫:২৪ এএম
ফতুল্লার জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসনের নির্দেশ নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
সরকারী খাল বেদখল ও অব্যবস্থাপনার কারনে জেলার ফতুল্লা ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তির শিকার।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা ও ডিএনডি বাঁধের ভেতরের বেশকিছু এলাকা। ওই অঞ্চলে লক্ষ লক্ষ মানুষ জলাবদ্ধতার দুর্ভোগের শিকার প্রায় গত ২০ বছর ধরে।
গতকাল মঙ্গলবার এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে স্থানীয় লালপুর পৌষার পুকুর পাড় এলাকার বেসরকারি চাকুরীজীবি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞার কাছে লিখিত আবেদন নিয়ে সাক্ষাত করেন।
কোন ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও কালক্ষেপন না করে গতকালই সদর উপজেলার ফতুল্লা ইউনিয়নের জলাবদ্ধ এলাকাগুলো জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম স্বয়ং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলে জলাবদ্ধতার প্রকৃত কারণ জেনে অবিলম্বে এলাকাবাসীর ভোগান্তি দূর করার নির্দেশ দিলেন জেলার এই অভিভাবক।
পরিদর্শনকালে তিনি খাল দখল মুক্ত করণ, পাম্পের ক্ষমতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের পাশাপাশি স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে তাৎক্ষণিক মতবিনিময়ও করেন।
এ সময় তিনি পূর্ব লালপুর থেকে নলখালী খাল পর্যন্ত, ফতুল্লা ডিআইটি মাঠের সাথে পানি সেচের পাম্প পরিদর্শন করে দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সাথে পরামর্শ করে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দেন এলাকাবাসীকে।
২০ বছরের সমস্যা আগামী দুই মাসেই সমাধানের আশ্বাসও দিলেন তিনি।
আবেদনকারী সিদ্দিক বলেন,এমন জেলা প্রশাসক নারায়ণগঞ্জে জীবনে কখনো দেখিনি। প্রায় দুই যুগের একটা সমস্যা নিরসনে স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কেউ সরেজমিনে পরিদর্শন করার সময়ও পায়নি।
কিন্তু এই ডিসি স্যার সমস্যাটি আমার কাছে থেকে শোনামাত্রই সরেজমিনে তীব্র রোদের মধ্যেও দুই ঘন্টা জলাবদ্ধ
প্রতিটি স্থানে গেলেন। স্থানীয় জনসাধরনের কথাও ধৈর্য সহকারে শুনলেন,তিনি আরো যোগ করেন।
স্থানীয় মো: মাইনউদ্দিন মুন্সী বলেন ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের পঞ্চবটি লালপুর মর্ডান হাউজিং থেকে পাইওনিয়র সোয়েটার কোয়াটার পর্যন্ত রাস্তাটি সব সময়ে পানি থাকে। আর একটু বৃষ্টি হলেই বাসা বাড়িতে রাস্তার পানি ঢুকে পরে। উক্ত এলাকায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্টস স্থাপিত আছে।
মোঃ সামছুদ্দীন বেপারী নামের আরেকজন স্থানীয় অধিবাসী বলেন আমাদের এলাকাটি বুড়িগঙ্গা নদীর দুরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার। তাই জলাবদ্ব এলাকাটি ডিএনডি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
মোঃ রফিকুল ইসলাম নামের স্থানীয় আরেকজন অধিবাসী জানিয়েছেন এই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক কর্মজীবি নারী পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন চরম দুর্ভোগ নিয়ে।
মো: শাহ-আলম নামের স্থানীয় এক যুবক দীর্ঘ দিনের জলাব্ধতার স্থায়ী সমাধান এবং ৩৭০ মিটার নতুন ড্রেন নির্মানের নেয়ার আর্জি জানান জেলা প্রশাসকের কাছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কাজী মঈনউদ্দিন বলেন আমাদের এলাকার এই সমস্যাটি ২০০৪ সাল থেকে শুরু হয়েছে। আশাকরি ১৯ বছরের এই সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান করবেন জেলা প্রশাসক মহোদয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রশিদুল মামুর রাফিদ বলেন,আজকেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধির সাথে সদর উপজেলা ইউএনওর একটা মিটিং হয়েছে। দুই তিন দিনের মধ্যেই আমরা মূল খালসমূহের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে একটা সার্ভে রিপোর্ট প্রস্তুত করবো।
এছাড়া জলবদ্বতার মধ্যে আছে এমন এলাকার মধ্যে সিটি কর্পোরেশন এর ছোট ড্রেনসমূহের যে সব যায়গায় ময়লা আবর্জনার কারনে পানি প্রবাহ বন্ধ আছে,সেইগুলো পরিষ্কার করলে পানি খালে আসবে। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি।
মূল খাল থেকে পাম্প দিয়ে পানি নদীতে ফেলে দিলেই জলাবদ্ধতার সমস্যা আর থাকবে না আশা করা যায়।
পরিদর্শন কালে জেলা প্রশাসকের সাথে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানব সম্পদ) আব্দুল ওয়ারেছ আনসারি, সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।