
প্রিন্ট: ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩৫ পিএম
নাফনদীতে আরাকান আর্মির তাণ্ডব : সাগরে যাচ্ছে না জেলেরা

কক্সবাজার প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ০৮:১১ পিএম

কক্সবাজারের টেকনাফের সীমান্ত নাফনদী জুড়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরাকান আর্মির তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে। এতে নাফনদীকে ব্যবহার করে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া বন্ধ রেখেছে জেলেরা। গত ১১ দিন ধরে টেকনাফের নাফনদীর বিভিন্ন ঘাটে চার শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার নোঙর করে রেখেছে বলে জানিয়েছেন জেলে, মালিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়ন এবং জেলে-মালিক সমিতির দেয়া তথ্য মতে, গত ৭ মাসে নাফনদী ও বঙ্গোসাগরের মোহনা সংলগ্ন এলাকা থেকে ৩৯ টি ট্রলারসহ ২০৪ জন জেলেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে বিজিবির পক্ষে দফায় দফায় যোগাযোগ করার পর ২৭টি ট্রলারসহ ১৮৯ জনকে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত ১৫ জেলেসহ ১২টি ট্রলার ফেরত পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে নতুন করে ১৩ জুন তাণ্ডব চালিয়েছে আরাকান আর্মি।
টেকনাফ কায়ুকখালীয়া ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমদ জানিয়েছেন, সাগরে মাছ ধরায় সরকারের ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর আরাকান আর্মি নাফনদী ও বঙ্গোপসাগরে তাণ্ডব বাড়িয়েছে। গত ১৩ জুন গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে ফেরার পথে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়ার নামক এলাকা থেকে টেকনাফের তিনটি মাছ ধরার ট্রলারসহ জেলেদের অস্ত্রের মুখে নিয়ে মিয়ানমারের ঘাটিতে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। ওই তিনটি ট্রলারে থাকা মাছ, জ্বালানি ও খাদ্যসামগ্রী লুট করে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুলত এরপর থেকে নাফনদীর বিভিন্ন ঘাটে থাকা ৪ শতাধিক ট্রলার মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে।
তিনি বলেন, ধরে নিয়ে যাওয়া তিনটি নৌযানের মধ্যে দুটি টেকনাফের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের। অপরটির মালিক মোহাম্মদ শওকত আলম নামে এক ব্যক্তি। জেলেদের মারধরও করেছে আরাকান আর্মি।
ট্রলার মালিক রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সাগরে কষ্ট করে মাছ ধরে ফেরার পথে আরাকান আর্মি সব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় সাগরে যাওয়ার সময়ও লুট করছে। ফলে ইচ্ছা থাকার পরও সাগরে ট্রলার পাঠানো যাচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলাপাড়া, দক্ষিণপাড়া, টেকনাফ পৌরসভার কাযুকখালীয়া ঘাটে ৪ শতাধিক ট্রলার নোঙর করে মাছ ধরা বন্ধ রাখার তথ্য জানিয়েছেন নৌযান মালিক সমিতির নেতারা।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মান্নান ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, সরকার এই সংকট কাটানোর উদ্যোগ না নিলে জেলেদের দুর্দশা আরও বাড়বে। জেলেরা মাছ না ধরায় হাটবাজারেও মাছের সংকট দেখা দিয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে এরই মধ্যে অনেক সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। বিজিবির প্রচেষ্টায় গত ডিসেম্বর থেকে কয়েক দফায় মিয়ানমার থেকে ১৮৯ জন জেলেকে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। প্রথমবারের মতো ২৭টি নৌযান ফেরত এনে মালিকদের হস্তান্তর করা হয়। তবে নতুন করে সমস্যায় পড়ার বিষয়টি জেলেরা কেউ বিজিবিকে অবহিত করেনি। এরপর বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে।
টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, সাগরে বাংলাদেশি জেলেদের মাছ ধরায় বাধা দেওয়া ও নৌযান নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নৌযান মালিকদের মাধ্যমে জেনেছি। কোস্টগার্ডের সদস্যরা এসব এলাকায় সব সময় সতর্ক রয়েছেন। জেলেরা যাতে কোনোভাবেই জলসীমা অতিক্রম না করেন।