‘টাকা না দেওয়ায় ব্ল্যাকমেইল’: দাবি শরীয়তপুরের ডিসির

এক নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তাদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন শরীয়তপুরের ডিসি মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ও ওই নারী। একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছেন পারিবারিকভাবে আত্মীয়তার সম্পর্কে থাকা এ দুইজন।

ওই নারী প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছেন, ডিসি আশরাফ বিয়ের প্রলোভনে তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তার বিবাহ বিচ্ছেদের পেছনেও ভূমিকা রেখেছেন।

এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ডিসি আশরাফের উল্টো অভিযোগ, ওই নারী তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ নিয়ে এক আইনজীবীর মাধ্যমে মধ্যস্থতার চেষ্টাও হয়। পরে চাহিদামতো টাকা না পেয়ে আগের কিছু ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

এদিকে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর আশরাফকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। শনিবার রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে অফিস আদেশ দিয়েছে।

এ ঘটনার পর শনিবার থেকে ডিসি আশরাফের ছুটিতে যাওয়ার তথ্য দিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আসলাম হোসাইন বলেন, “স্যার কর্মস্থলে নেই। যতদূর জানি, উনি দরখাস্ত দিয়ে কমিশনার স্যারের কাছ থেকে ছুটি নিয়েছেন।”

এদিকে সংবাদভিত্তিক একটি ইউটিউব চ্যানেলকে ওই নারী বলেছেন, ডিসি আশরাফ তার আত্মীয়। পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় ও বাসায় যাতায়াতের এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। তবে বেশ কয়েক মাস ধরে তাদের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছিল।

তার অভিযোগ, “উনি (ডিসি) আমার নিকটাত্মীয়। আমাকে বিয়ের কথা বলে আমার স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি করিয়েছেন। তিনি আমার সংসার, সমাজ ধ্বংস করে পথে বসিয়েছেন। এখন আমাকে বিয়ে না করে উল্টো মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন।”

এ অভিযোগ অস্বীকার করে ডিসি আশরাফ উদ্দিনের দাবি, ওই নারী তাকে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কর টাকা চেয়ে আসছিলেন। তাকে কয়েক দফায় ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দেওয়াও হয়েছিল।

“ব্ল্যাকমেইলটি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছছে, তখন সে মোটা অঙ্ক দাবি করে। সেই দাবি মেটানোর সামর্থ্য আমার নেই, তখন টাকা আদায় করার জন্য সে শরীয়তপুরে আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে।”

দুই মাস ধরে আশরাফ ও ওই নারীর মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছিলেন শরীয়তপুরের এক আইনজীবী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আইনজীবী বলেন, ওই নারী তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছিলেন ডিসি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে এখন বিয়ে করছেন না।

পরে ওই আইনজীবী ডিসি আশরাফের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।

আইনজীবীর ভাষ্য, তখন তিনি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দুজনের মধ্যে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু ওই নারী এতে রাজি না হয়ে বলেন, বিয়ের পর ডিসি তাকে মারধর করবেন ও তালাক দেবেন। পরে তিনি বিয়ের পরিবর্তে আশরাফ উদ্দিনের কাছে এককালীন ৫ কোটি টাকা দাবি করেন।

এ দাবি ডিসি আশরাফ না মানলে প্রতি মাসে এক লাখ টাকা করে হাত খরচ দাবি করেন। টাকা না দিলে ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেন, বলেন ওই আইনজীবী।

তার ভাষ্য, একপর্যায়ে ডিসি আশরাফ কিছু টাকা তাকে দেন।

আশরাফ উদ্দিনের দাবি, “ডিসি পোস্টিংয়ের পর থেকে টাকার জন্য অনেক চাপাচাপি করছিল। পরে মাসে মাসে তার অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। সে একে তো আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে, অন্যদিকে এগুলো (গোপন ছবি) সব জায়গায় দিল। আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেব।”