অন্তঃসত্ত্বাকে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা, শৌচাগারে প্রসব
যশোর প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ১০:৫৬ এএম
ছবি -সংগৃহীত
যশোরে জ্বর ও পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৯ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। ভর্তি হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে হাসপাতালের শৌচাগারে যান। সেখানে কোনো চিকিৎসা সহযোগিতা ছাড়াই সন্তান প্রসব করেন। শুধু সন্তান প্রসবই নয়, নিজের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করেন সদ্যভূমিষ্ঠ হওয়া ছেলে শিশুটিকে। এরপর প্রসূতি নিজেই শৌচাগারের বদনা দিয়ে নবজাতকের শরীর পরিষ্কার করছিলেন। এসময় শিশুটি কান্নার আওয়াজ শুনে কর্তব্যরত নার্স নবজাতক ও প্রসূতিকে উদ্ধার করেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) মধ্যরাতে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার (২০ জুন) বিকেলে বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। প্রসূতি রত্না বিশ্বাস (৩৬) বাঘারপাড়া উপজেলার জোহরপুর ইউনিয়নের খালিয়া গ্রামের বাসিন্দা রমেশ বিশ্বাসের স্ত্রী।
হাসপাতাল সূত্র ও প্রসূতির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রত্না ও রমেশ বিশ্বাস দম্পতির ঘরে ১০ বছর বয়সী এক মেয়ে ও আড়াই বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে আবারও রত্না অন্তঃসত্ত্বা হন। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে জ্বর ও পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের কাছে রত্না ও তার পরিবার ৯ মাস অন্তঃসত্ত্বার তথ্য গোপন করেন। এজন্য চিকিৎসকেরা তাকে গাইনি ওয়ার্ডে না পাঠিয়ে সাধারণ মেডিসিন বিভাগে পাঠান। সেখানে মেঝেতে বিছানায় চিকিৎসা চলছিল তার। হঠাৎ রাত আড়াইটার দিকে তিনি ওয়ার্ডের শৌচাগারে যান। সেখানেই তিনি এক ছেলে সন্তান প্রসব করেন। তখনও কাউকে ডাকেননি ওই প্রসূতি নারী। এরপর ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতকের শরীরে ময়লা পরিষ্কারের জন্য তিনি নিজেই ওয়াশরুমে বদনার পানি দিয়ে পরিষ্কার করছিলেন। নবজাতকের শরীরে পানি দিতেই কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। তখনই ওয়ার্ডে দায়িত্বে থাকা নার্স, আয়া ও অন্য রোগীর স্বজনেরা টয়লেটের ভেতরে যান। পরে নার্সরা নবজাতককে উদ্ধার করে শিশু বিভাগে ও প্রসূতি নারীকে গাইনি লেবার ওয়ার্ডে রেফার করেন। প্রসূতি নারীর লেবার ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে আর নবজাতকটিকে শিশু ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, তারা দুজনেই এখন শঙ্কামুক্ত।
নার্স রিনা সরকার বলেন, শিশুটির ওজন আড়াই কেজি। যা স্বাভাবিক ও সুস্থ শিশুর লক্ষণ। শিশুটি সুস্থ আছে।
এদিকে তথ্য গোপন করে হাসপাতালে ভর্তি, টয়লেটে সন্তান প্রসব করলেও কাউকে না ডাকা এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসা চলছে প্রসূতি রত্না বিশ্বাসের। তিনি বলেন, কীভাবে সন্তান প্রসব হলো বুঝতে পারছি না। তবে গর্ভবতী সেটা সবাই জানত।
রত্নার স্বামী মাছ বিক্রেতা রমেশ বিশ্বাস জানান, রত্না দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক সমস্যায় ভুগছে। বিষয়টি নিয়ে পরিবার থেকে চিকিৎসার চেষ্টা চলছিল।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হুসাইন শাফায়েত বলেন, ঘটনাটি নিয়ে নানা রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তথ্য গোপন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারপরে টয়লেটে সন্তান জন্মদান এসব নিয়ে তদন্ত চলছে। প্রসূতি নারী মানসিকভাবে অসুস্থ। শনিবার হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বরতদের সঙ্গে বসা হবে। তখন বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
তিনি আরও বলেন, বাচ্চাটিকে দেখভালের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিশুটি সুস্থ রয়েছে।



