
প্রিন্ট: ২৬ জুন ২০২৫, ১০:১৬ পিএম
কমলনগরে বিধবাকে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ

লক্ষ্মীপুর প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ০৯:৪৭ পিএম
-68503c9175f77.jpg)
ছবি-যুগের চিন্তা
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মতিরহাট মেঘনা নদীর পাশে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে সালেহা বেগম (৫০) নামে এক বিধবার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে স্থানীয়রা লাশটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করেন।
নিহত সালেহা বেগম চর কালকিনি ইউনিয়নের ৩ নম্বর এলাকার রাজার বাপেগো বাড়ির মৃত শাজাহানের স্ত্রী। তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ের জননী ছিলেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি গোপনে কম বয়সী ছিদ্দিক হুজুর নামে গৃহশিক্ষককে বিয়ে করেন। এ নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
নিহতের ছোট ছেলে শরিফ অভিযোগ করেন, তার মায়ের দ্বিতীয় স্বামী ছিদ্দিক হুজুর রাতে ফোন করে তাকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে পালিয়ে গেছে।
অন্যদিকে,স্থানীয়দের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে যে, মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতে না পেরে সন্তানেরা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, নিহত সালেহা বেগমের স্বামী শাজাহান গত নয় বছর আগে মারা গেছে। স্বামী মারা যাওয়ার ৫ বছর পর ঘরের গৃহশিক্ষক ছিদ্দিক হুজুরের সাথে গোপনে বিয়ে হয়। বিয়েকে কেন্দ্র করে ছেলেদের সাথে মায়ের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তার পর থেকে ছেলেরা পুরাতন বাড়িতে মাকে রেখে অন্য বাড়িতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন। পুরাতন বাড়িতে সালেহা ও সালেহার ৮০ বছরের বৃদ্ধ মা থাকতেন।
গত রাত (রবিবার) এশার পর থেকে ঘর থেকে নিখোঁজ হন সালেহা। এরপর(সোমবার) দুপুর ১২টার দিকে নদীর তীরে ফুটবল খেলতে যায় স্থানীয় ছেলেরা। সেখানে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে লাশ দেখে পরিবারে খবর দেন।পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ভাবলু জানান, আমরা ফুটবল খেলার জন্য নদীর তীরে গেলে লাশ পড়ে থাকতে দেখি। পরে এলাকার মানুষকে খবর দিলে নিহতের ছেলে আরিফ এসে তার মা বলে লাশ সনাক্ত করেন।
নিহতের মা ৮০ বছরের বৃদ্ধা নুরজাহান বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, সালেহার সাথে বাড়িতে শুধু আমি থাকি। গতকাল এশার নামাজের পর সালেহার ছোট ছেলে আরিফ ২ টি মটরসাইকেল নিয়ে স্থানীয় রিফাত,রহমানসহ কয়েকজনকে নিয়ে ঘরে আসেন। পরে সালেহা পিঠা বানানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। আমি নামাজ পড়তে অন্য রুমে যাই। নামাজ পড়ে এসে দেখি ঘরের দরজা খোলা। আবার দেখি সালেহা ঘরে নাই। পরে আত্মীয় স্বজনের বাসায় রাতে অনেক খোজাখুজি করেছি। সকালে লাশ পাওয়া গেছে বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গৃহশিক্ষক ছিদ্দিক হুজুর বলেন, আমি সালেহা বেগমকে ২০২০ সালে বিয়ে করি। বিয়ের পর থেকে আমার সাথে আমার স্ত্রীর সুসম্পর্ক ছিলো। কিন্তু সালেহার আগের সংসারের ছেলে ইসমাইল সালেহাকে মেরে ফেলার হুমকি দিতো। আমার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করার জন্য বহুবার চাপ সৃষ্টি করেছে। এমনকি রুমে আটকিয়ে সালেহাকে একাধিকবার মারধর করেছে সে।
"হয় ছিদ্দিক হুজুরকে ডিভোর্স দিবি না হয় তুই মরবি" এমন কথা বলে তার মা'কে হুমকি দিতো ইসমাইল।
তিনি আরো বলেন, চলতি মাসের ১০ তারিখে সালেহার আগের সংসারের মেঝো ছেলে শরিফ ও ছোট ছেলে আরিফ একসাথে বিদেশ থেকে দেশে আসেন। দেশে এসে বড় ছেলের নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে তারা সালেহাকে হত্যা করেন বলে জানান।
কমলনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে জানান।